কুমিল্লা নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সোমবার (২৩ জুন) দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে সুবিল ইউনিয়নের বুড়িরপাড় বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়কের কাজ পান ‘মেসার্স আরতার অ্যান্ড ইয়েস্টেড ইন্টারন্যাশনাল’ কোং লিমিটেড। এটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রায় চার বছর কাজটি মেকাডন করার পর ঢালাই করা হয়নি। সোমবার দুপুরে এলাকাবাসীর অভিযোগ পাওয়ার পর রাস্তাটি পরিদর্শনে এসে তিনি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার দেখতে পান। এরপর গত তিন চারদিন আগে কাজ করা পিচ ঢালাইয়ের বিভিন্ন অংশ হাতের টানেই তুলে ফেলেন। এরপর ঢালাইয়ের নিচে কোন খোয়া, বিটুমিন পিচ দেখতে পাননি। লাল রঙের মাটির ওপর ঢালাই দেখতে পান। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এর অধীনে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে বুড়িরপাড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের দরপত্র দেওয়া হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি টাকার চেয়েও বেশি। এই কাজের ঠিকাদার সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা ও সুবিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের।স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে রাস্তাটি টেকসই হবে না এবং অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে যেতে পারে। স্থানীয়রা রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আব্দুল্লাহপুরের বাসিন্দা আব্দুস সালাম ও অলিউল্লাহ খান বলেন, চেয়ারম্যান আবু তাহের আওয়ামীলীগের সময় সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। এছাড়াও তিনি দেবিদ্বার পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইফুল ইসলাম শামীমের মামা। এ দুই পরিচয়ের প্রভাবে দেবিদ্বারের অধিকাংশ সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। নিম্নমানের কাজ হলেও ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস করত না। রাজী ফখরুল ও শামীমের ছত্রছায়ায় থেকে বিভিন্ন সড়কে অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই সময়ে এসেও তিনি এই অনিয়ম ছাড়তে পারেনি। আমরা তার ঠিকাদারী লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।অনিয়মের অভিযোগে এ প্রকল্পের ঠিকাদার আবু তাহের চেয়ারম্যান বলেন, আমি কাজ করছি, এটা বুঝে নিবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার। আমি এসব বুঝি না। তবে কোন সমস্যা হলে আমার লোক আছে ঠিক করে দিবে। এক পর্যায়ে নিম্ন মানের কাজ হয়েছে স্বীকার করে দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন সরি, আমি এটি ঠিক করে দেব। হাসনাত আব্দুল্লাহ কালের কন্ঠকে বলেন, সুবিল ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর থেকে বুড়িরপাড় বাজার পর্যন্ত সড়কের কিছু বাজেট আগে এসেছে পরে বর্তমান সরকার আরও কিছু বাজেট দিয়েছেন। এলাকার গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এলাকায় এসে দেখি গত তিন চার আগের পিচ ঢালাই হাতের টানে চলে আসছে, ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত বিটুমিন ব্যবহার না করা হয়নি। নিচে কোন খোয়া নেই, মাটির ওপর পিচ ঢালাই করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে ডেকে দেখানো হয়েছে তিনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন, কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। জনগণের টাকা যেন সঠিক ব্যবহার হয়। একটা টাকাও যেন কারও পকেটে না ঢুকে এটা হচ্ছে কথা। সরকার যে টাকা দিবে মানুষের শ্রম ঘামের টাকা, ট্যাক্সের টাকা এটা দিয়ে রাস্তা হবে, এ রাস্তা দিয়ে মানুষ হাটবে, এক টাকা কোনভাবে অপচয় করতে দেব না। এই রাস্তা দিয়ে জনগণ হাটবে। আগে আওয়ামীলীগ যা করেই এই এ সময়ে তা ভুলে যেতে হবে। এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, আমি নিজে রাস্তায় ঘুরে দেখেছি, রাস্তায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। আমি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হাসনাত আব্দুল্লাহকে জানিয়েছি। আপাতত ওই রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।