Spread the love

কুমিল্লার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্তে সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চা দোকান। এসব দোকান শুরুতে সাধারণ চা বিক্রির জন্য স্থাপন হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা এখন পরিণত হয়েছে তরুণদের আড্ডাখানায়। শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই শত শত মোটরসাইকেল আরোহী এসে ভিড় করছেন এসব দোকানে। সন্ধ্যা নামতেই জমে ওঠে আড্ডা, আর সেই চা আড্ডার ছদ্মবেশেই মিলছে মাদক। (২০ জুন ২০২৫) শুক্রবারে কুমিল্লার সীমান্তে বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া-বাগড়া সড়কসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়,বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্ত এলাকার সড়কগুলোর পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চা-দোকান।বিশেষ করে কুমিল্লা-বাগড়া সড়কের পাশে ফকিরবাজার, দক্ষিণগ্রাম,শংকুচাইল,হরিমঙ্গল,সেনের বাজার,শশীদল রেলস্টেশনের (পূর্ব- পশ্চিম) পাশে,বাগড়াসহ সীমান্ত সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার চা-দোকান ঘিরে শহর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই শত শত মোটরসাইকেল আরোহী তরুণরা এসে ভিড় করছে। চায়ের স্বাদ নিতে এসে জমে উঠে আড্ডা। এসব আড্ডা চলে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।

শশীদল রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় চা- আড্ডা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানায়,এসব চা-দোকানে আসা মোটরসাইকেল আরোহীদের নেই লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। চা- আড্ডার আড়ালে তরুণদের হাতের নাগালে মিলছে মাদক। এসব চা দোকানের আড়ালে মাদক সেবন ও কেনাবেচা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সহজেই মিলছে এসব আড্ডায়। এর ফলে যুবসমাজ দিন দিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং বাড়ছে কিশোর গ্যাং।

এ বিষয় বুড়িচং উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সমন্বয়কারী ও শংকুচাইল গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহেল রানা তালাশ বাংলাকে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর সীমান্তে এলাকায় অসংখ্য চা – দোকান স্থাপন হয়েছে আর এই দোকানগুলো ঘিরে দূর-দূরন্ত এলাকা থেকে আসছে দৈনিক হাজারো মোটরসাইকেল আরোহী। যুবকরা এখানে এসে মাদক সেবন করে থাকে আর চিনি বেশি দিয়ে চা খায়। এতে নেশা বাড়ে। এসব দোকানগুলোতে বসে চুরি,ডাকাতি,ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে থাকে কিশোর গ্যাংরা। দিন দিন যে হারে মাদক বৃদ্ধি পাচ্ছে যা চব্বিশের বন্যার চেয়েও ভয়ংকর। এসব দেখেও প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। ছয়গ্রাম বাজারের হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার মোস্তফা জামাল তালাশ বাংলাকে জানায়,শহর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মোটরসাইকেল আরোহী আসছে। সীমান্তে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক সেবন করে চা-দোকানগুলোতে আড্ডাতে মেতে উঠে। এসব দোকানে নেশাখোরদের মিষ্টি চা বানানো হয়।এখানে আড্ডা রাত পর্যন্ত চলে। এতে কিশোর গ্যাং বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসন জরুরী অভিযান পরিচালনা না করলে আগামীতে ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে।

বুড়িচং উপজেলার দক্ষিণ চা-দোকানে মোটরসাইকেল আরোহী ভিড়।

। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা তালাশ বাংলাকে বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের শব্দে এলাকা মুখর হয়ে ওঠে। বাইরের এলাকা থেকে লোকজন এসে এবং চোরাকারবারিরা এসব দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে। অনেকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে, যা পরিবার-পরিজন নিয়ে চলাফেরায়ও ভয় পাই। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, এসব চা দোকানের বৈধতা, মালিকদের পরিচয় ও আশেপাশের কার্যক্রম খতিয়ে দেখে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান জোরদার করার দাবিও উঠেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মী ও বুড়িচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী খোরশেদ আলম ও সংবাদকর্মী শরীফুল ইসলাম সুমন তালাশ বাংলাকে জানায়,বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সীমান্তে গড়ে ওঠা এসব চা দোকান যেন যুবসমাজ ধ্বংসের ফাঁদে পরিণত না হয়, সে জন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। না হলে আগামী দিনের সমাজব্যবস্থায় এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন।তারা আরো বলছে, কেবল অভিযান চালালেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। এর জন্য প্রয়োজন এলাকাবাসী, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগ। এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে শশীদল রেলস্টেশন সংলগ্ন চা-দোকান এলাকা থেকে লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে যায় থানায় এবং বিভিন্ন সড়কে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান চলমান রেখেছে। অপর দিকে বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক তালাশ বাংলাকে জানায়, আমিও নিজে দেখে এসেছি এসব চা-দোকান ঘিরে মোটরসাইকেল আরোহী ভিড়। অভিযান বিষয়ে ইউএনও স্যার ও সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা চলমান রয়েছে এবং শিঘ্রই অভিযানের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন তালাশ বাংলাকে জানায়,সীমান্তবর্তী এলাকার দোকান ও আড্ডাখানাগুলো নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হচ্ছে এবং সন্দেহজনক দোকানগুলোর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ চলছে।অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *