Spread the love

১৯৩৯ সালে ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় পবিত্র নগরী মাশহাদে এক ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বেড়ে ওঠেন সেই সময়ে, যখন ইরান এক উত্তাল রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যার পরিণতি ১৯৭৯ সালের বিপ্লব। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছার মধ্যে আড়ালে রয়েছেন কেন্দ্রীয় চরিত্র আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি ইরানের রহস্যময় ও নিভৃতচারী সর্বোচ্চ নেতা। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করার সম্ভাবনা নাকচ করেননি। সোমবার এবিসি নিউজকে তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওপর হামলা কোনো বৃহত্তর যুদ্ধ উসকে দেবে না; বরং এটি হতে পারে চূড়ান্ত মোড়। এটি সংঘাত বাড়াবে না, বরং এর সমাপ্তি ঘটবে। একদিন পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খামেনিকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা জানেন তিনি ঠিক কোথায় আছেন। বিপ্লবী সহচর থেকে সর্বোচ্চ নেতা ১৯৩৯ সালে ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় পবিত্র নগরী মাশহাদে এক ধার্মিক পরিবারে জন্ম নেন খামেনি। তিনি বেড়ে ওঠেন সেই সময়ে, যখন ইরান এক উত্তাল রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, যার পরিণতি ১৯৭৯ সালের বিপ্লব। তৎকালীন অ্যামেরিকা-সমর্থিত স্বৈরশাসক মোহাম্মদ রেজা পাহলভির নিরাপত্তা বাহিনী তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করে। এরপর তিনি ইরানের ধার্মিক বিরোধীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং বিপ্লবের নায়ক আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর আশির দশকে খামেনি ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। ১৯৮৯ সালে খোমেনির মৃত্যু হলে আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নিযুক্ত হন। এরপর থেকেই তিনি দেশের রাজনৈতিক, সামরিক ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে নিজেকে সুসংহত করেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ। ইরানের ধর্মতন্ত্রে খামেনির সর্বময় ক্ষমতা সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের সব শাখার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন। বিচার বিভাগ, রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা তার হাতে। এমনকি কে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারবেন, তা নির্ধারণেও চূড়ান্ত মত তার। পররাষ্ট্রনীতি এবং সামরিক কৌশলের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বও তার হাতে। তিনি নেতৃত্ব দেন ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কোর-আইআরজিসিকে, যারা দেশের ইসলামি শাসনব্যবস্থার রক্ষক এবং সাধারণ সামরিক বাহিনীর বাইরে একটি শক্তিশালী কাঠামো। তিনি পরিচালনা করেন কুদস ফোর্স, যারা ইরানের বিদেশি সামরিক তৎপরতা দেখভাল করে থাকে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্তও খামেনির। ফলে ইযরায়েলের সঙ্গে বর্তমান সংঘাতের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনিই। ইরানের অঞ্চলভিত্তিক কৌশলের রূপকার গত কয়েক দশকে খামেনি ইরানের কট্টর বৈদেশিক নীতির মূল স্থপতি হিসেবে কাজ করেছেন। তার অধীনে অ্যামেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের প্রভাব মোকাবিলায় নিজেকে একটি শক্তিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে ইরান। লেবানন থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত একাধিক প্রক্সি গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিয়ে তেহরান নিজের প্রতিপক্ষদের চাপে রেখে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে। সেই কৌশল ধসে পড়ে শুক্রবার, যখন ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটি ইরানের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। ইসরায়েল বলেছে, এ সামরিক অভিযান ইরানকে পরমাণু অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে চালানো হয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং তারা বোমা তৈরি করছে না। ২০০৩ সালে খামেনি একটি ধর্মীয় ফতোয়া জারি করেন। এতে বলা হয়, ইসলামে পারমাণবিক অস্ত্র হারাম। ওই বক্তব্যের পরও ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, ইরান বোমা বানানোর সক্ষমতা অর্জন করতে চায়। খামেনির চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং তার অবস্থান সচরাচর প্রকাশ করা হয় না। বিশ্লেষকদের মতে, তার নিরাপত্তা দেখাশোনা করে একটি বিশেষ এলিট রেভুল্যুশনারি গার্ড ইউনিট, যারা সরাসরি তার অফিসে রিপোর্ট করে। গত সপ্তাহে তাকে একটি গোপন আস্তানায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে, যেখান থেকে তিনি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছেন। গত বছরও হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর একটি নিরাপদ স্থানে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েল ইরানে একের পর এক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *