Spread the love

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছের জাঁতাকলে পড়ে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। সারা বছর ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু থাকায় শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন, সে বিষয়ে মনস্থির করতে পারছেন না। ফলে তারা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর ১০২৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যথাসময়ে ক্লাস শুরু করলেও বছর শেষে সিট খালি রেখে পাঠদান চালিয়ে যেতে হয় বিভাগগুলোকে। এ ছাড়া কোটার ৯১টি আসনের অধিকাংশ আসনই শূন্য থাকে। এদিকে গুচ্ছের প্রভাবে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় গত বছরই মোট আসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১০ আসন কমিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২-২৩ সেশনে ভর্তি হন ১০২৮ জন শিক্ষার্থী। তবে বছর না পেরোতেই ৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছেন। এ ছাড়া আরও ৪১ শিক্ষার্থী এসএসসি এবং এইচএসসির মূল সনদ উত্তোলন করে নেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়েও তারা সনদ জমা দেননি বলে জানিয়েছে রেজিস্ট্রার দপ্তর। তবে তারাও হয়তো কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গিয়েছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, রসায়ন ও কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে ৮ জন; ফার্মেসি বিভাগে ৭ জন; নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬ জন; পরিসংখ্যান ও একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে ৪ জন; পদার্থ, ইংরেজি, অর্থনীতি, আইসিটি বিভাগে ৩ জন; মাকের্টিং বিভাগে ২ জন; বাংলা, লোকপ্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগে ১ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছেন। এ ছাড়া সার্টিফিকেট উঠিয়ে জমা দেয়নি রসায়ন বিভাগের ৮ জন, গণিত ৬ জন, বাংলা, নৃবিজ্ঞান ৪ জন পদার্থ, পরিসংখ্যান ৩ জন, লোকপ্রশাসন, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও মাকের্টিং বিভাগে ২ জন , প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার, আইসিটি, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ ও ইংরেজি ১ জন শিক্ষার্থী। ভর্তি বাতিল ও সনদ জমা না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। সারা বছর ভর্তিপ্রক্রিয়া চালু থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন, সে বিষয়ে মনস্থির করতে পারেন না। ফলে তারা এক বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। এতে সিট ফাঁকা রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয় কুবিকে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে বলেও জানান তারা। অনেক আশা নিয়ে ২০২১ সালে ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও প্রত্যাশার সিকিটুকুও পূরণ করতে পারেনি গুচ্ছ ভর্তি কার্যক্রম, এমনটা মনে করছেন কুবি শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাইম। তিনি দ্যা বলেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল কাজ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। কিন্তু জেলায় জেলায় যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হয়েছে, সেখানে যদি শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষক না থাকেন, তাহলে এসব বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকির সায়েদ উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। কিন্তু গুচ্ছের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। শুধু এ বছর নয়, প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট খালি থেকে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গুচ্ছের দায়িত্বরতদের কাজ করতে হবে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো একাডেমিক মিটিংয়ে পাস হয়ে তারপর আসতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী যদি আবার চলে না যায়, সে ক্ষেত্রেও একটা জটিলতা সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট খালি থাকা দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গুচ্ছের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আমরা পদক্ষেপ নেব। তবে এই ক্ষতি পূরণ করার কোনো পদ্ধতি আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের বিষয়ে তো বলতে পারছি না, তবে সামনে যাতে এই ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে আমরা অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেব। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুচ্ছ যথাযথ পদ্ধতি নয়। এখন গুচ্ছ থাকবে কি না, বিকল্প কোনো কিছু করা যায় কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *