ছবি: তালাশ বাংলা

কুমিল্লা শহরের উত্তরে সবচেয়ে নিকবর্তী উপজেলাটির নাম বুড়িচং। এ উপজেলা ১৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ভিতরে ৯টি ইউনিয়ন, ১৭২টি গ্রাম ও ১৫২টি মৌজা রয়েছে। প্রায় দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭০৫ জন মানুষের বসতি এ উপজেলায়।উত্তরে দেবিদ্বার ও ব্রাহ্মণপাড়া, পশ্চিমে চান্দিনা, দক্ষিণে আদর্শ সদর এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। আর একটু বৃষ্টি হলে এই ত্রিপুরা রাজ্যের পানি নেমে আসে এ অঞ্চল দিয়ে। কয়েক মাস আগেও ভারতীয় ঢলের কারণে গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙা পড়ে বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে।এ উপজেলায় অধিকাংশে খাল দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে পানি নিস্কাশন হইতে অনেক দিন সময় লেগে যায় এতে ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।

স্থানীয় ভূমি অফিসের সূত্রমতে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ২০৩টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও বর্তমানে অধিকাংশের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঠিক তদারকির অভাবে খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে খালের চিহ্নটুকুও নেই।

ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে খালগুলো দখল করে নিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।সূত্রে জানা যায়, ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় ২০৩টি খালের মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি, বাকশীমুল ইউনিয়নে ৩টি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩টি, ষোলনল ইউনিয়নে ৫টি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি ও মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে।

কিন্তু সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে কাগজে কলমে খালের সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা যায় না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাস্তাঘাট নির্মাণে সহজীকরণের কারণে বিভিন্ন গ্রামের খাল ও নালাগুলো ভরাট করে ফেলা হয়েছে। জানা যায়, এ উপজেলার অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ কৃষিকাজের সাথে জড়িত। তাদের প্রধান কৃষিপণ্যই ধান। সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় পয়াতের জলা নামক এলাকায়। কিন্তু এখানে সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ক্ষতি হয় আবাদি ফসল ধানের। দুর্ভোগ পোহাতে হয় কৃষকদের। এই দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য আওয়ামীলীগ সরকার আমলে বিএডিসি কয়েকটি খাল পুনঃখনন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। পরবর্তীতে খালগুলোর খনন কাজ শুরু করলেও অদৃশ্যের কারণে পরিপূর্ণভাবে কাজ শেষ হয়নি।বর্তমানে ওইসব খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিশেষ করে বুড়িচং সদর বাজারের পশ্চিম পাশের তিথী খালটি ওই এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর কারণে সঠিক ভাবে খালের খনন কাজ শেষ করা হয়নি। প্রভাবশালীদের কারো বাড়ি রক্ষা করতে গিয়ে, কারো দোকান রক্ষা করতে হবে- ইত্যাদি নানা অজুহাত মানতে গিয়ে খালটির খনন কাজ আর এগোয়নি। ফলে খনন কাজ আঁধা-আধিভাবে শেষ করার পর কিছু দিনের মধ্যেই বুড়িচং বাজারের ময়লা-আর্বজনা ফেলার কারণে খালটি আবার ভরে গেছে। এতে খাল ও নালাগুলো ভরাট হয়ে জলাবদ্ধতা আরো বাড়িয়ে দেয়। ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ সুজন বলেন, পয়াতের জলা থেকে হরিপুর-জরুইন হয়ে যে খালটি গেছে, তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। এতে কৃষকদের আবাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। হরিপুর জরুইনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালটি যে করেই হোক পুনঃ খনন করা দরকার। বুড়িচং বাজারের খাল সংলগ্ন দোকানদার মোঃ ফিরোজ মিয়া বলেন, খালটিতে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলেছে। ময়লা আবর্জনার দূর্গন্ধে ব্যবসা পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই এই খালটিসহ ভরাট হয়ে যাওয়া সকল খাল দ্রুত খনন করা প্রয়োজন।

পয়াতের জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল পুনঃ খনন আন্দোলনের মুখপাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন বলেন, পয়াতের জলার কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে খালটি পুনঃ খনন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দফতরে গিয়েও আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই যদি বুড়িচং বাজারের পশ্চিম অংশের খালের ময়লা পরিষ্কার করা না হয়, তা হলে উপজেলা পরিষদ চত্বরের শহীদ মিনারে গণ অনশন কর্মসূচি পালন করব। বুড়িচং মডেল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মোঃ কবির হোসেন বলেন,খালগুলো খনন না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়। কৃষকরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দ্রুত খালগুলো খননের দাবী জানাচ্ছি। বুড়িচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী খোরশেদ আলম বলেন,প্রভাবশালীদের দখলে হারিয়ে যাচ্ছে ২০৩টি খাল। এই খাল যদি উদ্ধার ও খনন না হয় তাহলে এ উপজেলার কৃষি জমি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার বলেন,উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অফিসকে খনন করার জন্য ভাগ করে দিয়েছি। আশা রাখি দ্রুত খনন কাজ শুরু হবে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *