কুমিল্লার সেনানিবাসের উত্তর প্রান্তে বুড়িচং উপজেলায় অবস্থিত ময়নামতি কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও স্মরণানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারসহ ৮টি দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রির বাংলাদেশ কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আব্দুর রহিম সবুজ জানান, স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী সেনাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই সমাধিক্ষেত্রে সবুজ ঘাসে মোড়া জমিন, সুসজ্জিত গাছপালা ও পরিচ্ছন্ন সমাধিফলক দর্শনার্থীদের মনে এক গভীর ছাপ ফেলে। এখানে ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের সমাধি রয়েছে। সমাধিক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭, কানাডার ১২, অস্ট্রেলিয়ার ১২, নিউজিল্যান্ডের ৪, অবিভক্ত ভারতের ১৭১, রোডেশিয়ার ৩, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ ও পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন সেনা সমাহিত আছেন। প্রথমে মোট ৭৩৭ সেনার দেহ সমাহিত করা হয়েছিল; পরবর্তীতে জাপানের ২৪ সেনার দেহাবশেষ স্বদেশে ফেরানো হলে বর্তমানে এখানে ৭১৩ সেনা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। স্মরণানুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুকসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী পিএসসি, কমান্ডার ১০১ পদাতিক ব্রিগেড। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মারুফ, ভারতের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার এম এস সাবরওয়াল, অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিক নার্দিয়া সিম্পসন, কানাডার প্রতিনিধি মার্কাস ডেভিস, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্টোনিও আলেসান্দ্রো, স্পেনের রাষ্ট্রদূত গ্যাব্রিয়েল সিস্টিয়াগা, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইকেল মিলার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মেগান বোল্ডিন, ডেনমার্কের প্রতিনিধি অ্যান্ডারস বি. কার্লসন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্টিফেন ফোর্বস। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি কমান্ডার ১০১ পদাতিক ব্রিগেড, ৬ ক্যাভালরি ও ৩৩ মিলিটারি পুলিশের অধিনায়কসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, নিহত সৈনিকদের পরিবার ও বংশধররা। সব মিলিয়ে মোট ১৮৪ জন অংশগ্রহণ করেন এই স্মরণানুষ্ঠানে। শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্মরণ সংগীত পরিবেশনা, দুই মিনিট নীরবতা পালন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও প্রার্থনা শেষে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুমিল্লা জোনের কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করেন।
