কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাত, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বাররা। পাশাপাশি তারা সোমবার (১৫ জুলাই) কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থা জানিয়েছেন। স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ অধ্যাদেশ ১৮৩ এর ধারায় ১২ এর উপধারা (৩) মোতাবেক ৩ নং চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে ৩নং চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের সকল ওয়ার্ডের এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের মেম্বারগন অনাস্থা দেন। অনাস্থা দেওয়া চান্দলা ইউনিয়নের মেম্বাররা হলেন- মোসাঃ লুৎফা বেগম, মোসাঃ জরিনা বেগম, মোঃ আতাউর রহমান, মোঃ রাকিব উদ্দিন খান, মো. নজরুল ইসলাম, মো. শিপন, মো. জাবেদ, মো. আলমগীর হোসেন,শাহ আলম ও মো. সাইফুল ইসলাম। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ৩ নম্বর চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনেছেন পরিষদের ১০ জন সদস্য (৮ জন সাধারণ সদস্য ও ২ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য)। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে তারা কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে ও বিকালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ওমর ফারুক ২০২১ সালে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একাধিক গুরুতর অনিয়মে জড়িত রয়েছেন। পরিষদের সিদ্ধান্ত বা সদস্যদের কোনো মতামত ছাড়াই এককভাবে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সরকারি প্রকল্প যেমন কাবিখা, কাবিটা, টিআর, এলজিএসপির টাকা উত্তোলন করে কাজ না করেই আত্মসাৎ করার কথাও বলা হয়েছে।
অভিযোগকারীরা দাবি করেন, ইউনিয়ন পরিষদের ট্যাক্স আদায়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি সরকারি সেবা গ্রহণে জনগণের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন চেয়ারম্যান। অথচ এসব অর্থ পরিষদের হিসাব বা ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এছাড়া, দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে পরিষদের সদস্যদের সম্মানিভাতা প্রদান করা হয়নি। সদস্যদের বেতন চাওয়া নিয়ে চেয়ারম্যান তাদেরকে হুমকি-ধমকি ও গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, চেয়ারম্যান নিজের লোক দিয়ে ডেজার চালানোর অনুমতি দেন টাকার বিনিময়ে, অফিসে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, গ্রাম আদালতের কার্যক্রম ব্যাহত হয়, এবং জনগণের সেবা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ ও চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের বিষয়েও অভিযোগ রয়েছে। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ভাতা নিজের ইচ্ছেমতো বিতরণ, বাল্যবিবাহে বয়স সংশোধনের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ, মাদকসেবীদের সঙ্গে সখ্যতা, এবং নিজের মাদকাসক্তি নিয়েও গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবন করে জনগণের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করারও অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে চেয়ারম্যান পরিষদের আনুমানিক ৬০ লক্ষ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন, যার কোনো ব্যাংক জমা বা অফিসিয়াল রেজুলেশন নেই। তিনি পরিষদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সদস্যের মতামত গ্রহণ না করে এককভাবে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সবশেষে অভিযোগকারীরা জানান, চেয়ারম্যান প্রশাসনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বলপূর্বক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। মেম্বারদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধার কারণে তারা এ অনাস্থা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। চান্দলা ইউনিয়নবাসীর স্বার্থে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন অনাস্থা প্রদানকারী ইউপি সদস্যরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা জাহান তালাশ বাংলাকে বলেন, চান্দলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিঁধি মোতাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।