Spread the love

কুমিল্লার লাকসামে সম্পত্তির জন্য এক ব্যক্তিকে হাত পা বেঁধে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর দাবি, বড় ছেলেকে বাদ দিয়ে বাকি সন্তানদের সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর এলাকায় নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বাবা। নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির নাম আবদুল জলিল (৬০)। তিনি গোপালপুর মৃত হাজী ওয়ালীউল্লার ছেলে। আর অভিযুক্তরা হলেন- আব্দুল জলিলের ছেলে নোমান (২০), রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নুপুর (১৩) ও স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)। এদিকে, আবদুল জলিলকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এক মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বাড়ির উঠান থেকে বৃদ্ধ বাবাকে ধরে টানাহেঁচড়া করছে এক ছেলে। পিঠ ও ঘাড় ধরে একের পর এক ধাক্কা দিচ্ছেন তিনি। গায়ের গেঞ্জি টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আরেক ছেলে রশি খোঁজায় ব্যস্ত। পরে রশি দিয়ে দুই ছেলে বাবার হাত-পা বাঁধছে। এরপর এতে যোগ দেয় মেয়েও। বাঁধা শেষে বাবার মুখে গরম পানি ঢালছেন তারা।

এ সময় ওই বৃদ্ধ চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘ও আল্লাহ রে’, ‘ও মা গো মা’, ‘ভাইরে ভাই’, ‘জসিমের মা আমারে বাঁচা’, ‘কে কোথায় আছেন, আমাকে বাঁচান, আমাকে মাইরা ফেলছে তারা’। স্থানীয়রা জানান, আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ও মাঠে ১২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে প্রবাসে থাকেন। সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে দিতে প্রায়শ বাবাকে মারধর করে সন্তানেরা। এমনকি, বাবাকে ভরণপোষণও দিচ্ছে না তারা। এ নিয়েই স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশি বৈঠকও হয়েছে। জলিলের প্রতিবেশীরা জানান, ওই দিন স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার। এর জেরে ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালান জলিল। পরে ছেলে-মেয়েরা বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল বলেন, সেদিন আমার সন্তানেরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমাকে মারতে থাকে। মারতে মারতে হাত-পা বাঁধে। হাত-পায়ে ও শরীরে এখনো মারধরের দাগ আছে। এক ছেলে আরেক ছেলেকে বলে, ‘হালারপো হালারে পিডা’। আমার স্ত্রী এ সময় বলে ‘তার কাছে নগদ টাকা আছে, কোথায় রাখছে সেগুলো জিজ্ঞাসা কর। টাকাগুলো লইয়া ল’। পরে স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে। ভয়ে এখন পর্যন্ত আমি বাড়িতে যাইনি। সারারাত রাস্তায় ছিলাম। এ বিষয়ে লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *