বছর ঘুরে আবারও এলো খুশির ঈদ। দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এখন অপেক্ষা কেবল ঈদের চাঁদের। আকাশে নতুন চাঁদ উদিত হলেই দেশব্যাপী পালন করা হবে আনন্দময় ঈদুল ফিতরের উৎসব। এরই মধ্যে অনেকের মনে গুঞ্জরিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী সেই গানের সুর ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। পবিত্র ঈদুল ফিতরের উৎসব ঘিরে মুমিন হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দের ঢেউ। কারণ ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি ভাগাভাগি করা। ঈদ মানে আত্মত্যাগের মহিমায় নিজেকে শানিত করা। ধনী-গরিব এক কাতারে দাঁড়ানো, একই আনন্দে হারিয়ে সাম্যের নিদর্শন স্থাপনের নামই ঈদুল ফিতর। ইতিমধ্যে ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে রাজধানী ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়াসহ দেশের বড় বড় মসজিদ ও ঈদগাহ। অনেকেরই ঈদের আনুষঙ্গিক কেনাকাটাও প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা ‘শাওয়াল’ মাসের চাঁদের। আকাশের পশ্চিম কোণে খুশির বারতা নিয়ে দেখা দেবে এক ফালি চাঁদ। তাতে ঝরতে থাকবে খুশির জ্যোৎস্না। শুরু হবে খুশির ঈদ-আনন্দ উৎসব। মুসলমানের জন্য ঈদের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈদ একটি ইবাদত। আনন্দ ও ফুর্তির মাধ্যমেও যে ইবাদত-বন্দেগি পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ। শরিয়তসম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশের বিষয়ে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত, সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।’ (সুরা ইউনুস : ৫৮) দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আসে ঈদুল ফিতর। রমজান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সুসংবাদ নিয়ে আসে। মুসলমানরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ এবং পরকালের জীবনকে সমৃদ্ধ করেন। পার্থিব জীবনে মুসলমানদের জন্য এটা অনেক বড় আনন্দের বিষয়। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে মাহে রমজান শেষে খুশির ঈদ। কারণ এই ঈদ ফিতরা দিয়ে গরিবের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়। ঈদ ধনী-গরিবের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। রমজান ও ঈদের আদর্শিক দর্শন আছে, সেগুলো সেভাবে মানুষের বুঝতে হবে এবং পালন করতে হবে। তা না হলে সমাজে রমজান বা ঈদ-আনন্দের কোনো প্রভাব পড়বে না। রমজানে ১ মাস ধরে আমরা যে সংযমের প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকি তার চূড়ান্ত রূপ হলো ঈদুল ফিতর। কিন্তু এই সংযমের প্রশিক্ষণটা আমাদের জীবনে যদি স্থায়ীভাবে প্রভাবিত না করতে পারি তা হলে রমজান বা ঈদের কোনো মাহাত্ম্য থাকবে না। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা, ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে একজন মুসলমান প্রকৃত মানুষ হওয়ার, আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি অর্জনের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই প্রচেষ্টারই একটি পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে ঈদ। নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ এ আনন্দঘন মুহূর্তে সবাইকে অংশীদার করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মূলত যারা রোজা পালন করেছেন তাদের জন্য ঈদুল ফিতর আনন্দ ও উৎসবের দিন। ঈদুল ফিতরের দিন হলো পুরস্কার লাভের দিন। আমরা জানি, হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে এদিনের ব্যাপারে অনেক সুসংবাদের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেমন বলা হয়েছে, ‘এদিন এক দল ফেরেশতা দাঁড়িয়ে থাকেন এবং বলতে থাকেন, হে প্রশান্ত বান্দা তোমরা দয়াময় প্রভুর দিকে ছুটে চলো। তিনি তোমাদের কল্যাণ দান করবেন। তিনি তোমাদের পুরস্কার দেবেন।’ ঈদের রাতে দোয়া কবুল হয়। তাই রমজান শেষ মানে এ কথা মনে করার কারণ নেই যে, ইবাদত-বন্দেগি থেকেও আমরা অবসর পেয়েছি। বরং ঈদের রাতে আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করার মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর দরবারে আরও প্রিয় পাত্র হিসেবে হাজির করা এবং ঈদগাহে যাওয়ার আগেই গরিব-দুঃখীদের মধ্যে ফিতরা বিতরণের মাধ্যমে সামাজিক দায়বোধও পূর্ণ করা চাই। তবেই পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর পালন সার্থক হবে। ঈদ মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও বাংলাদেশের জনসমষ্টির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। ঈদ ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের প্রকাশ ঘটায়। ঈদের ইবাদত পালনে শরিয়ত নির্দেশিত কিছু বিধিবিধান রয়েছে, যা পালনে সামাজিক জীবনে পারস্পরিক আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও বন্ধন সুসংহত হয়। এ ছাড়া ঈদের নামাজের আগে ফিতরা ও ফিদিয়া আদায় করা, ঈদগাহে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, খুতবা শোনা এবং উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করা শরিয়তের বিধান। ঈদে নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পবিত্র মাহে রজমান এবং ঈদুল ফিতর আমাদের সেটাই শিক্ষা দেয়।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *