গাজা উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলি হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গতকাল ভোরে ওই হামলা ঘটনা ঘটে। গাজায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় অচলাবস্থার মধ্যে এ হামলা হলো। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ হামলায় আহত হয়েছে আরো কয়েকশ মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে যে তারা হামাসের ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে’ আক্রমণ চালাচ্ছে। হামলা অব্যাহত রয়েছে, আইডিএফ অনেক এলাকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন করে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শনিবার ভোরে ওই হামলা যখন শুরু হয় তখন ফিলিস্তিনিরা সেহরি খাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হামলার পর ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চারদিকে আগুন, লাশ এবং চিকিৎসার জন্য হাহাকার করতে থাকা আহত মানুষদের দেখা গেছে। ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজা শহর, রাফাহ ও খান ইউনিসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে শুরু করে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার অসংখ্য জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে থাকছে। চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, গাজা সিটির একটি ভবন এবং মধ্যাঞ্চলীয় গাজার দেইর আল বালাহ এলাকার কমপক্ষে তিনটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস ও রাফার বিভিন্ন জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। হামলার কিছুক্ষণ পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, জিম্মিদের মুক্তির জন্য হামাসকে চাপ দেয়ার উদ্দেশ্যেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, ‘হামাস বারবার আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দূত স্টিভ উইটকফ ও মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।’ তবে হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপ বলেছে, নেতানিয়াহু জিম্মিদের পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলার ঘটনায় আমরা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিলের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ এনে হামাস ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, ইসরায়েল গাজায় বন্দি অবশিষ্ট ইসরায়েলি জিম্মিদের একটি অজানা ভাগ্যের দিকে ঠেলে দিল। সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট আরো গভীর হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য জোরালোভাবে আবেদন করেছেন। রাশিয়ার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে এটিকে উত্তেজনা বৃদ্ধির আরেকটি পথ বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া হামলার নিন্দা জানিয়েছে চীন, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, সৌদি আরব, জর্ডান, ইরান, মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়। ওই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রচেষ্টা চালানো হলেও তা ব্যর্থ হয়। তখন থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা ছোট দলকে লক্ষ্য করে নিয়মিত ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের হিসাব অনুসারে এ হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে, এ হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলায় উপত্যকার বেশির ভাগ বাড়িঘর ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *