কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কুসুমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে নেই প্রধান শিক্ষক। যোগ্যতাহীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে কার্যক্রম। এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে ইংরেজি, গণিত, বায়োলজিসহ ছয়টি বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই। এতে করে দিন দিন কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী ভর্তির হার, উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন অভিভাবকরা। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এম এ গনি ভূঁইয়া কুসুমপুর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তার মৃত্যুতে প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য হয়। পরবর্তীতে এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোসাম্মৎ রাবেয়া সুলতানা’কে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেয়ে ১২ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন রাবেয়া সুলতানা। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাতা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় নিজ নামে অংশগ্রহণ করতে পারে বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

২০১৯ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়, এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর অদ্যবধি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক পায়নি বিদ্যালয়টি। নিয়ম অনুযায়ী ১৪ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। ইংরেজি, গণিত, বায়োলজি, লাইব্রেরিয়ান, আইসিটি ও চারুকারু এই ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষক নেই। খন্ডকালীন শিক্ষক ও অন্য বিভাগের শিক্ষকদের দিয়ে কোনমতে চলছে পাঠদান। শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার আবেদন করেও সারা মিলছে না বলে জানায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ রাবেয়া সুলতানা। এদিকে অদৃশ্য কারণে দীর্ঘ ১২ বছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া ও পরিপূর্ণ যোগ্যতা না থাকার পরও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন পূর্ববর্তী বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া সুলতানা জানান, ২০১৩ সালে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনবার প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, কিন্তু এই পদে কেউ আগ্রহী ছিল না বিধায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যায়নি। তবে অদৃশ্য কারণে ২০১৫ সালের পর থেকে এমপিও হওয়ার পরও অদ্যবধি ১০ বছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোন বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন কেন প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হচ্ছে না এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া সুলতানা জানান, এটার দায় ও ব্যর্থতা পূর্বের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। তিনি আরো বলেন, এমপিও হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে যে সকল যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন তার নেই। তারপরও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই তাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি যেকোনো সময় প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান। তিনি আরো জানান, এই বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক আজমল হক বিদ্যালয় থেকে ছুটি কিংবা পদত্যাগ পত্র জমা না দিয়ে ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়া চলে যান। অদ্যবধি তিনি দেশে ফেরত আসেনি। তিনি ব্যাংক থেকে কিছু লোন নিয়ে যাওয়ার কারণে জটিলতা সৃষ্টি রয়েছে, যার কারনে এই পদটি শুন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিয়োগসহ সকল শূন্য পদের শিক্ষকের দেয়ার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য অভিভাবক মোঃ আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, জমি দিয়ে, টাকা দিয়ে, শ্রম দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু বর্তমানে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পূর্বের ম্যানেজিং কমিটির হাতের পুতুলের মতো কাজ করছে। আমরা দ্রুত প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষক নিয়োগ চাই। ৫ আগষ্টের পূর্বে থাকা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল বাশার ভূইয়া জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকার কারনে এই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক হয়ে কেউ আসতে চায় নি, যার কারনে নিয়োগ দেয়া যায় নি। বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, বহুবার বলার পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়নি। এ বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাহিদা আক্তার জানান, কুসুমপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ বুড়িচং উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে এরকম সমস্য রয়েছে। এগুলো তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *