Spread the love

খুলনায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মো: সুমন নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত এবং অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক আহত হয়েছে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দু’পক্ষের সংঘর্ষে নগরীর গল্লামারী থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহতদের মধ্যে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র শফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফরান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফাইয়াজ, নর্থ ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাফিদ, সেন্ট যোসেফ স্কুলের ছাত্র মুগ্ধ, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইউসুফ, স্কুল ছাত্র জাহিদুল (১৫), মাদরাসা ছাত্র সৌরভ (১৩), রনির (২০) নীরব (২১) এবং পুলিশ সদস্য সোহাগ, রাজু আহমেদ ও মাজহারুল ইসলামের নাম জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ছাত্রীও রয়েছে। আহতদের বেশিভাগই গুলিবিদ্ধ বলে জানা গেছে। রাত সাড়ে ৮ পর্যন্ত একজন ছাত্রী, একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল মো: সুমনের নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক। নিহত সুমন খুলনা পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। সংঘর্ষকালে পুলিশ ব্যাপক রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতদের বিচার দাবিসহ নয় দফা দাবিতে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে নগরীর শিববাড়ী মোড়ে জড়ো থাকে শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নিউমার্কেট ঘুরে কেডিএ মসজিদের সামনে দিয়ে গল্লামারীর দিকে রওনা দেয়। মিছিলটি সোনাডাঙ্গা থানার সামনে পৌঁছালে মিছিলের পেছন থেকে সোনাডাঙ্গা থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: ওয়াহিদুজ্জান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিলেন। তবে কেউ আহত হননি।’ পরে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পার হওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সাথে এক ঘণ্টাব্যাপী পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এ সময় গল্লামারী মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা পিছু হটে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় শিক্ষার্থীরা নগরীর জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় এবং ৫টার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সাথে আন্দোলনকারীদের আবারো সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ ব্যাপক রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নগরীর গল্লামারী এলাকায় পুলিশের একটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া এবং বেশ কিছু দোকানপাট ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বিনাউস্কানিতে বাধা প্রদান, গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পযন্ত নগরীর এম এ বারী সড়কের কাচাবাজার এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে রয়েছে। তাদেরও সাজোয়া যান নিয়ে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। সেখানেও টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এছাড়া নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় কে বা কারা অফিসটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে মাইকে ঘোষণা করেন, খুবির বেশ কিছু শিক্ষার্থী সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল এলাকায় আটকে পড়েছে। আপনারা তাদের উদ্ধার করে খুবি ক্যাম্পাসে পৌঁছে দিন। এছাড়া খুবির ছয় ছাত্রী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে খুলনা ক্যাম্পসে আটকা পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের সহপাঠীরা অ্যাম্বুলেন্স চেয়েও সহযোগিতা চান। এর আগে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্তনগরী সাত রাস্তা মোড়সহ দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *