Spread the love

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর আব্দুল মতিন খসরু সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোঃ মফিজুল ইসলামের শেষ কর্মদিবস উপলক্ষে শিক্ষক পরিষদ, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী এবং এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো এক বর্ণাঢ্য বিদায় সংবর্ধনা।মঙ্গলবার কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সকাল থেকেই কলেজ ক্যাম্পাস ও মিলনায়তন সাজানো হয় মনোমুগ্ধকর শোভায়।
উপাধ্যক্ষ মোঃ জামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলেজের প্রাক্তন ছাত্র বায়েজিদ সুমন। বক্তব্য দেন ফজলুল রহমান মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবু তাহের, নিমসার জুনাব আলী কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মামুন মিয়া মজুমদার, কুমিল্লা রেসিডেন্সিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হান্নান, শংকুচাইল ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ সাদেক ভূঁইয়া, পারুয়ারা আব্দুল মতিন খসরু কলেজের অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, নাগাইশ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ খলিলউদ্দিন আখন্দসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও অতিথিবৃন্দ।

এছাড়াও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম, সাবেক চেয়ারম্যান জামশেদুল আলম, জসিমউদ্দিন স্যার ও তরুণ নেতা এমদাদুল হক পলাশ।
প্রভাষক মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় এবং প্রভাষক মোঃ শাহানুর রহমানের পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। মানপত্র পাঠ করেন প্রভাষক সুরেখা বেগম। শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রভাষক আখতারুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক খোরশেদ আলম ও লাইব্রেরিয়ান দুলাল হোসেন।
বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিদায়ী অধ্যক্ষকে ফুলের তোড়া, স্মারক ও উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডাঃ আবু হানিফ, আরিফুর রহমান ও মিজানুর রহমান। প্রায় পাঁচ শতাধিক অতিথির উপস্থিতিতে ‘বিদায় স্মরণিকা’ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষের সহধর্মিণী ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ শামীমা আক্তার রেখা। তিনি পারিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যক্ষের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বিদায়ী অধ্যক্ষ মোঃ মফিজুল ইসলাম সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবেগঘন বক্তব্য দেন এবং সন্তুষ্টচিত্তে দীর্ঘ কর্মজীবন সম্পন্ন করতে পারায় মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করেন। দোয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে ফুলেল সজ্জিত গাড়িতে তাকে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বিদায় জানানো হয়। ছাত্র-শিক্ষক ও এলাকাবাসী ফুল ছিটিয়ে তাকে ভালোবাসায় সিক্ত করে বিদায়ী মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখেন।

বিদায়ী অধ্যক্ষের সহধর্মিণী, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শামীমা আক্তার রেখা বলেন, ‘তার দুটি পরিবার। একটি কলেজ, আরেকটি আমরা। কলেজকে তিনি সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আজ আপনাদের চোখ ভেজানো ভালোবাসা দেখে বুঝছি, তিনি সঠিক পথেই হেঁটেছেন।’

অধ্যক্ষ মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন কলেজে যোগ দিই, তখন শিক্ষার্থী ছিল শতাধিক। অনেকেই ঠিকমতো বেতন দিতে পারত না। আজ সেখানে ১২০০’র বেশি শিক্ষার্থী। টিনের ঘর থেকে বহুতল ভবনে রূপ নিয়েছে কলেজটি। সবার সহযোগিতায় কিছু কাজ করতে পেরেছি। এই তৃপ্তি নিয়েই অবসরে গেলাম।’

তিনি আরও বলেন, অবসরজীবনে বাগান করা ও শিক্ষা-সামাজিক কর্মকাণ্ডে সময় দিতে চান।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে তিনি গণিতের প্রভাষক হিসেবে কলেজে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ধারাবাহিক ভালো ফলাফলের কারণে ২০১৮ সালে কালিকাপুর আবদুল মতিন খসরু কলেজ সরকারিকরণ হয়।
শীতকালীন ছুটির মধ্যেও বিপুল উপস্থিতি আয়োজনটি ছিল আনন্দ-অভিভূত এক আবেগঘন বিদায় উৎসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *