বগুড়া শহরের উপকণ্ঠ বনানীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে এক নারী ও তার ছেলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকালে লাশ উদ্ধারের পর জড়িত সন্দেহে পুলিশ ওই নারীর স্বামী সেনাসদস্য আজিজুল হককে (২৩) আটক করে। তিনি স্ত্রী ও শিশু সন্তান হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশের। শনিবার রাত আটটা থেকে সাড়ে ৮টার দিকে শুভেচ্ছা আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আজিজুল হক বগুড়ার ধুনট উপজেলার হেউতনগরের হামিদুল ইসলামের ছেলে। তার স্ত্রীর নাম আশামণি (২০) এবং তাদের এক বছরের ছেলে আবদুল্লাহ আল রাফি। আশামণি বগুড়া শহরের আকাশতারা এলাকার আসাদুল ইসলামের মেয়ে। রবিবার (৩ জুন) দুপুর দুইটার দিকে শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল হক স্বীকার করেছে যেম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গত শুক্রবার শুভেচ্ছা হোটেলে এসে একটি কক্ষ বুকিং দেয়। এরপর বগুড়া শহর থেকে গরু জবাই করার চাকু কেনে। কেনাকাটা করে দেয়ার কথা বলে শনিবার বিকেলে শ্বশুরবাড়ি থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে শহরে বের হয় আজিজুল। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হোটেলে ওঠে। হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতায় পরিচয় গোপন করে নাম লেখেন মিরাজ, বাড়ি রংপুর। স্ত্রীরও অন্য নাম লেখেন। রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে প্রথমে স্ত্রীকে বাথরুমে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এরপর শিশুসন্তানকে গলা কেটে হত্যা করতে গিয়ে দেহ থেকে মাথা আলাদা হয়ে যায়। পরে সন্তানের মাথা ব্যাগে ভরে হোটেলকক্ষে তালা দিয়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী রেলসেতু থেকে করতোয়া নদীতে ফেলেন। ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার পর আজিজুল হক গতকাল রাতে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে স্ত্রী-সন্তানকে হারানোর মিথ্যা নাটক সাজান। তিনি শ্বশুরকে সঙ্গে নিয়ে রাতভর শহরে খোঁজাখুঁজি করে থানায় অভিযোগ নিয়ে যায়। সকালে স্ত্রী-সন্তানের সন্ধান চেয়ে শহরে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করে। পরে সকাল ১০টার দিকে ভাড়া পরিশোধ করতে আজিজুল হোটেলে গেলে তার কথাবার্তায় কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করে থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তাকে হেফাজতে নেয়। রবিবার দুপুর দুইটার দিকে হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের শোকে বিলাপ করছেন আশামণির বাবা আসাদুল ইসলাম (৬০)। তিনি বলেন, ‘বিয়ার সময় জামাই কচলো, যৌতুক দেয়া লাগবি না। জামাইয়ের কতাত খুশি হয়্যা হামমি নিজত থ্যাকে শহরত তিন শতক জায়গা কিনে দিবার চাচনু। সেডাই কাল হলো। বিয়ার পর জমির বদল জামাই পাঁচ লাখ টেকা চাচলো। ধারদেনা করে তাক এক লাখ টেকা দিচি। বাকি চার লাখ টেকার জন্যি হামার মেয়ে আর নাতিটাক এভাবে গরুর মতো জবাই দিল?’। আশামণির মা গোলাপি বেগম বলেন, সন্তানের জন্মের পর থেকে ধুনটে শ্বশুরবাড়িতে থাকত তার মেয়ে। শুক্রবার মেয়ে ও নাতিকে নিয়ে জামাতা বেড়াতে আসে। গতকাল বিকালে কেনাকাটা করে দেয়ার কথা বলে মেয়ে ও নাতিকে সঙ্গে নিয়ে বাসা থেকে বের হন জামাতা। রাত ৯টার দিকে কল করে জানান যে মেয়ে ও নাতিকে খুঁজে পাচ্ছে না সে। রাতভর শ্বশুরকে নিয়ে খোঁজাখুঁজি করে। স্ত্রী-সন্তানকে নিজে হত্যা করে এভাবে যে নাটক করেছে আজিজুল, সেটা ঘুণাক্ষরেও তারা বুঝতে পারেননি। শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত সেনাসদস্য আজিজুল হক চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত। দুই মাসের ছুটিতে তিনি বগুড়ায় আসেন। বগুড়া ১১ পদাতিক ডিভিশনের মিলিটারি পুলিশের পক্ষ থেকে আজিজুলের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। আটক আজিজুল হককে নিয়ে শিশুটির মাথা উদ্ধারে করতোয়া নদীতে তল্লাশি চলছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, নেপথ্যে যাই থাকুক, এটি স্ত্রী-সন্তানকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *