শারদীয় দুর্গোৎসব জমে উঠেছে। পাঁচদিনের এই উৎসবকে ঘিরে সারাদেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবার মহাসপ্তমীতে ভক্ত, পূজারী ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছিল সারাদেশের ৩৩ হাজার ৩৫৫টি পূজাম-প। ম-পে ম-পে এদিন ছড়িয়ে পড়েছিল উৎসবের বারতা। তৃতীয় দিন আজ মঙ্গলবার মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশনসহ বেশ কয়েকটি পূজাম-পে একই সঙ্গে কুমারী পূজাও আয়োজিত হবে। অষ্টমীর মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। আজ ফুল, জল, বেলপাতা, ধূপ-দীপসহ ষোড়শ উপাচারে কুমারীরূপে দেবী দুর্গারই আরাধনা করা হয়। মহাসপ্তমীর দিনে সোমবার সকালে ম-পে ম-পে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহীত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক ম-পেই ছিল আরতি, স্বেচ্ছায় রক্তদান, দরিদ্র্যদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ, নৃত্যনাট্য, ভক্তিমূলক সংগীত, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজনও। সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকার পূজাম-পগুলোও এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। সরেজমিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি ম-প ঘুরে সর্বত্র উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। ম-পে ম-পে মহাসপ্তমীর পূজা দেখতে আসা নানা বয়সী দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এ ভিড় ছিল উপচেপড়া। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষরাও। এতে ম-পগুলো বাঙালির সার্বজনীন উৎসবের মেলাঙ্গনে রূপ নেয়। আজ মঙ্গলবার মহাষ্টমীর দিন দর্শনার্থী, পূজারী ও ভক্তদের এ ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় পূজাম-প হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ^রী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির ম-পে ছিল উপচেপড়া ভিড়। আজ মহাষ্টমীর দিনে সেখানে ১০ হাজার ভক্তের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। মহাষ্টমীতে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পরাম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটের পর সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠসহ কয়েকটি পূজাম-পে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে দুর্গাপূজা আয়োজনের কারণে এসব ম-পে পূজার সময়ের হেরফের ঘটবে কিছুটা। তবে আজকের দিনের প্রধান আকর্ষণই থাকবে কুমারী পূজা। আজ সকালে রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে এই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অল্পবয়সী একটি মেয়েকে কুমারী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হবে। শাস্ত্রমতে এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরম্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে ঊমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছরে অল্পদা বলা হয়ে থাকে। আজ দেবীর প্রতীক হিসেবে যে কুমারী মেয়েটিকে পূজা করা হবে, প্রথা ও নিরাপত্তার কারণে তার নাম ও পরিচয় পূজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয় না বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ। কুমারী পূজা ছাড়াও আজ রামকৃষ্ণ মিশনে হাজার হাজার পূজারী ও দর্শনার্থীর মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। রাজধানী ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশনের নারায়ণগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও ফরিদপুরসহ কয়েকটি মঠ এবং কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী পূজাম-পেও আজ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
