কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় শতাধিক পোল্ট্রি ফার্ম গড়ে ওঠায় যত্রতত্র মুরগীর বিষ্ঠা ফেলার কারণে মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ডিম উৎপাদন করা ফার্মগুলোতে দুর্গন্ধ ছড়ায় বেশি। আর এতে ফার্ম সংলগ্ন বাসাবাড়ির মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছে। জনবসতি এলাকার ৫০০ গজ দূরত্বে মুরগি ও ডিম উৎপাদন করার ফার্ম করার নিয়ম থাকলেও বুড়িচং উপজেলায় এসব নিয়ম-কানুন কেউ মানছেন না। স্কুল-কলেজ মাদরাসা কিংবা জনবসতির পাশে এবং কোথাও কোথাও জনবসতির মধ্যেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য পোলট্রি ফার্ম। যার বেশির ভাগেরই নেই পরিবেশ ছাড়পত্র ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের রেজিস্ট্রেশন।যার কারণে দুর্গন্ধযুক্ত মুরগির বিষ্ঠায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পঁচে যাচ্ছে পুকুর ও খাল বিলের পানি। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব্য শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। মুরগীর খামার ও গরু খামার করে যত্রতত্র ময়লা ফেলে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ি। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ব্যবসায়িরা কাঁচা-পাকা বিভিন্ন আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে স্তুপ করে ফেলে রেখেছেন মুরাগির বিষ্ঠা। কোথাও-কোথাও মাসের পর মাস সড়ক ও বসতবাড়ি আঙ্গিনায় পাশেই রয়েছে দুর্গন্ধযুক্ত মুরগির বিষ্ঠা।এদিকে বুড়িচং উপজেলার বাকশীমূল ইউনিয়ন খারেরা গ্রামে মুরগির খামারের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় খামারটি স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা । শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ বছর ধরে খারেরা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম তার নিজস্ব জায়গাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্রয়লার মুরগির খামার স্থাপন করে রেখেছে। বর্তমানে খামারে কয়েক হাজার ছোট-বড় মুরগি রয়েছে।খামারের দক্ষিণ পাশে খোলা স্থানে মুরগির বিষ্ঠা প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে যার কারণে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের আশেপাশে প্রায় ২০টি পরিবার সহ অন্যান্য মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, একটি মুরগির খামার স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং জনগণের ক্ষতি হয় এমন স্থানে খামার স্থাপন করা যাবে না। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, খামারটির আশপাশে মুরগির বিষ্ঠা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। খামারের চারপাশে বসতবাড়ি। এসব বাড়ি থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী জাহিদুল ইসলামের জায়গাতে মুরগির খামার করেন। খামারটি বর্তমানে ভাড়া নিয়ে মুরগি লালন-পালন করে আসছে জাকির হোসেন ও তোফায়েল আহম্মেদ নমক ব্যক্তিরা। গ্রামের বাসিন্দা ও ফকিরবাজারের ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশেই খামার। বিষ্ঠা থেকে সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। আশপাশে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’গত রবিবারে বাড়ির গৃহপালিত প্রায় ৪০টি হাস খামারের বিষ্ঠা খেয়ে মারা গেছে। এই এলাকার বাসিন্দা মুন্নী, মিনা,নূরজাহান, রিনা ও সাকিব সহ অন্যান্যরা বলেন,মুরগির বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। নাকে-মুখে কাপর চেপে পাড় হতে হয় এসব এলাকা। মাঝে মধ্যে সড়কের আশ-পাশের বসতঘরের কাছেই স্তুপ করে রাখা হয় এসব বিষ্ঠা। নিজেদের ঘরের দরজা-জানালাও বন্ধ করে থাকতে হয়। আর কোনকিছু খেতে গেলে বমি হওয়ার অবস্থা হয়। তারা আরো জানান, মুরগির বিষ্ঠার কারণে পুকুর ও খালের পানি পঁচে যাচ্ছে। মশা-মাছি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পাখীরা এসেও ঠোকর দিচ্ছে। পঁচা গন্ধ ভেষে বেড়াচ্ছে বাতাসে। যে কারণে ব্যপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন এই এলাকার মানুষ। খারেরা গ্রামের মুরগী খামার ভাড়া নেওয়া পরিচালনাকারী জাকির হোসেন জানান,আমি জাহিদুল ইসলাম থেকে ভাড়া নিয়েছি, ওনি যেখানে নির্ধারণ করে দিয়েছে আমরা সেখানে মুরগীর বিষ্ঠা ফেলে দেই। খামার মালিক জাহিদুল ইসলাম জানান,আমি তেমন বেশি বাড়িতে থাকি না তবুও মুরগীর বিষ্ঠা অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছি তারা ভ্যানগাড়ি দিয়ে এসব ময়লা নিয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি মেম্বার হাজী ফয়েজ আহম্মেদ ও চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল করিমের সাথে কথা বললে তারা জানান,এসব খামার মালিকদের আমরা অনেকবার বলেছি তারা মুরগীর বিষ্ঠা সরিয়ে নিচ্ছে না। বুড়িচং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার বলেন, ইউএনও স্যারের নির্দেশনা রয়েছে, যারা নীতিমালা উপেক্ষা করে খামার স্থাপন করা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তের ইন্সপেক্টর জোবায়ের হোসেন বলেছেন,নীতিমালা উপেক্ষা করে খামার স্থাপনের মাধ্যমে যারা পরিবেশ দূষণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহিদা আক্তার বলেন,নীতিমালা উপেক্ষা করে বুড়িচংয়ে অনেক খামার স্থাপনের অনেক অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। ইদানিং এমন অভিযোগে মোকাম ইউনিয়নে একটি গরু খামারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।বুড়িচংয়ে মুরগী খামার স্থাপন করে আশে-পাশের পরিবেশ দূষণ করেছে এমন অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
