কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ময়নামতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান ভূঁইয়া ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাষক মো. মজিবুর রহমানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। অধ্যক্ষ শাহজাহান ভূঁইয়া একইসঙ্গে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধেই ওঠে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ভয়াবহ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের শেষদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে চলতি বছরের ৫ মার্চ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, অধ্যক্ষ শাহজাহান ভূঁইয়া প্রতারণার মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪২ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এছাড়া, ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে আরও ১ লাখ ১ হাজার ৩৮২ টাকা উত্তোলন করেন। ২০২৩ সালে ম্যানেজিং কমিটির তৎকালীন সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য হাজী মো. তারিক হায়দার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫ লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন এবং তদন্তে এর প্রাথমিক সত্যতাও মিলেছে। একপর্যায়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেন উক্ত অর্থ ফেরতের। তিনি ২০২৩ সালের জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফায় ৮০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন।অধ্যক্ষের দুর্নীতি সময়কালীন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ.লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার। অন্যদিকে, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পান প্রভাষক মো. মজিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়ম, শ্রেণি কার্যক্রমে অনুপস্থিতি, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ২০২৪ সালের নীতিমালার ৫৪ নম্বর বিধি অনুযায়ী উভয়কে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থাকা জেসমিন সুলতানা শিল্পী জানিয়েছেন, বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষের কাছ থেকে কোনো নথিপত্র বুঝে না পাওয়ায় তিনি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, “আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। তদন্ত পুনর্গঠন হবে। বিচারাধীন অবস্থায় আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।”
বরখাস্তকৃত প্রভাষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, “আমি এখন দূরে আছি, পরে সরাসরি কথা বলব।”
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হক জানান, “আমি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, সিদ্ধান্ত নিয়েছে গভর্নিং বডি।” বুড়িচং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান তালাশ বাংলাকে বলেন, “তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ ও প্রভাষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নিবেন গভর্নিং বডি উদ্বর্তন কর্মকর্তাগণ।”
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন তালাশ বাংলাকে বলেন, “আমি যোগদানের পর বিষয়টি জেনেছি। অভিযুক্তরা এখনো আত্মসাতের টাকা ফেরত দেননি। চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *