গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলে গোমতীর সচরাচর রূপে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। জলে জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে গোমতী। এতে গোমতীর নিজস্ব সৌন্দর্য প্রকাশিত হওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাংলার চিরচেনা বর্ষার রূপ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গোমতীর সুদর্শন বেড়িবাঁধ নদীর তীর ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট রিসোর্ট। এসব রিসোর্ট ঘিরে শেষ বিকেলে জমে থাকতো দর্শনার্থীদের ভিড়।কয়েকদিনে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে গোমতীর টইটুম্বর সৌন্দর্য ডুবে যাওয়ায় উপভোগ করতে পারছে না বিভিন্ন বয়সী মানুষ।অপরদিকে বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের কিংবাজেহোড়া গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি ও বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে দুই পাড়ের মানুষ।জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ নদীগুলোর একটি হলো গোমতী নদী। গোমতী একটি পার্বত্য নদী। এটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পার্বত্যভূমির মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে কুমিল্লার সদর উপজেলার গোলাবাড়ি, টিক্কারচর, কাপ্তান বাজার হয়ে বয়ে গেছে। এটি কুমিল্লা সদর পেরিয়ে শহরের উত্তর প্রান্ত এবং ময়নামতির পূর্ব প্রান্ত অতিক্রম করে জেলার বুড়িচং উপজেলাকে ডানে রেখে এটি ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ পৌঁছেছে।ময়নামতি থেকে কোম্পানীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। কোম্পানীগঞ্জ থেকে পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে দাউদকান্দি উপজেলার শাপটা নামক স্থানে এসে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে গোমতী। কোম্পানীগঞ্জ হতে মেঘনা নদীতে পতিত হওয়া পর্যন্ত গোমতীর দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, আর বাংলাদেশ ভূখণ্ডে গোমতীর দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার। এই নদীর উপনদী ডাকাতিয়া এবং এর শাখা নদীর নাম বুড়ি নদী।কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরবর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের মালাপাড়া, আসাদনগর, মনোহরপুর, অলূয়া, রামনগর ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে থইথই করছে গোমতী। অনেক বছর পর গোমতী নদীতে এত পানি জমতে দেখা গেছে। যার ফলে প্রকৃত গোমতীর রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।২১ আগষ্ট ২০২৪,বুধবার বিকেলে কুমিল্লা গোমতী নদীর চাঁনপুর, টিক্কারচর, ছত্রখীল, বানাশুয়া, পালপাড়া,বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া,কায়তরা,পূর্বহোড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নদীর বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।অনেকে বেড়িবাঁধের ফাটল বন্ধ করা জন্য স্থানীয় যুব সমাজ উদ্যোগ নিয়ে বন্ধ করছে। অপরদিকে ময়নামতি ইউনিয়নের কিংবাজেহোড়া গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দিতে রয়েছে।এ দিকে চরের শাক সবজির জমিগুলো ডুবে গেছে৷ চরের ভেতর বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এই মানুষগুলো আজ ও আগামীকাল কিংবা পরশু পর্যন্ত নদীর আইলে রাত কাটাবে। স্রোতের গতি অস্বাভাবিক রয়েছে । বাঁধ ভেঙ্গে যাবার আংশকা করছে স্থানীয়রা।স্থানীয়রা আরো জানায়,এক সময় এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান পথ ছিল গোমতী নদী। নদীতে ছোট বড় অনেক নৌকা চলতো। বহুদূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এ বাজারে আসতো পণ্য কেনাবেচার জন্য। এখানে ছিল এক সময়ের অর্থকরী ফসল পাটের বৃহত্তম বাজার। সেই সঙ্গে চাল, আলু ও মাছের বিশাল বাজার বসতো। এখন সেই ভরা নদী মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। গোমতীর চরের মাটি কেটে নিয়ে গেছে মাটি খেকোরা। যার কারণে আগের মতো ফসল তেমনটা উৎপাদন হয় না এবং বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলে গোমতির বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।
