Spread the love

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার কারণ হিসেবে ধর্ম অবমাননার প্রমাণ পায়নি র‌্যাব। চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পর উত্তেজিত জনতার কাছে তুলে দেন কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ। এরপর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহে আগুন দেওয়া হয়। আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাব।
শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহে নিজ কার্যালয়ে র‌্যাব-১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ঘটনার সূত্রপাত। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ দিপুকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। এরপর উত্তেজিত জনতার কাছে হস্তান্তর করেন তিনি। তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। এমনকি তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। এই কারণে কারখানার সংশ্লিষ্ট দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা।’
নয়মুল হাসান বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার বিষয়টি খুবই অস্পষ্ট। তিনি কী বলেছেন, এটি খোঁজার চেষ্টা করলেও কেউ এটি বলতে পারেনি। কারও সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল কিনা, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। ঘটনার সূত্রপাত কার সঙ্গে হয়েছে, সেটি শনাক্ত করা যায়নি। আমরা জানতে পেরেছি, কাজ করার সময় ফ্লোরেই বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। তাকে কোনোভাবেই আর কারখানার ভেতরে রাখা যাচ্ছিল না। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা আসামিদের ধরেছি। কী কারণে ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্ঘাটন ও জড়িত সবাইকে ধরতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।’
এ ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভিডিও দেখে পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। এর মধ্যে র‌্যাব সাতজনকে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত দিপুর ছোট ভাই শুক্রবার ভালুকা থানায় একটি মামলা করেন।
শ্রমিকদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিকেলে এক নারী শ্রমিক ফ্লোরের সুপারভাইজার দিপু চন্দ্র দাসের কাছে আসরের নামাজ পড়ার অনুমতি চান। দিপু অনুমতি দেননি। ওই নারী বিষয়টি তার কয়েক সহকর্মীকে জানান। এতে তারা ক্ষিপ্ত হন।
তবে কারখানার একাধিক সূত্রের দাবি, পুরো বিষয়টি ছিল সাজানো। দিপু মেধাবী এবং শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তার কর্মদক্ষতায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল।
কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দু’জন অধস্তন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে সুপারভাইজার দিপুর পদে বসার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু মেধায় দিপুকে টপকাতে না পেরে তারা দুই মাস ধরে তাকে চাকরি থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছিলেন। এর আগে চক্রটি দিপুর বিরুদ্ধে নারী কর্মীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ তুলেছিল। তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মী বলেন, ‘দিপু কোনো ধর্ম অবমাননার বক্তব্য দেননি। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও নেই। এটি ছিল মূলত তাকে পদ থেকে সরানোর পরিকল্পনা।’

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *