Spread the love

এ ম্যাচে বাংলাদেশ বাড়তি কিছুই করতে চায়নি। নিজেদের ডিফেন্সটা সলিড রেখে, মিড ব্লকে খেলেছে পুরোটা সময় জুড়ে। তাতে করে প্রথমার্ধের কাউন্টার অ্যাটাকে আদায় করা বাংলাদেশের একটা গোলই শেষ অবধি জয়ের জন্য হয়েছে যথেষ্ট। ২২টা বছরের অপেক্ষা। হামজাকে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া। ফুটবলের জাগরণের স্ফুলিঙ্গকে মশালে পরিণত করার সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানো। সাউথ এশিয়ান ক্ল্যাসিকোতে ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়া। সবটাই হল, সবটাই বাস্তব হল। বাংলাদেশ দল জয় পেতে পারে। বাংলাদেশ দল জিততে পারে। বাংলাদেশ দল র‍্যাংকিংয়ের তোয়াক্কা করে না। বাংলাদেশ দল এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। একেবারে জ্যাম-প্যাকড স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের হিসেব কষা শুরু। আকাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ। সাউথ এশিয়ান ক্ল্যাসিকোতে বাংলাদেশের পরম আরাধ্য জয়ের অন্বেষণ। মাঠে ১১ জন, পুরো গ্যালারিতে আরও ২৫ হাজার। এই নিয়ে মাঠের লড়াই বাংলাদেশের। বলের দখলে কিংবা আক্রমণের পরিমাণে ভারত এগিয়ে থাকলেও, প্রথমার্ধে কাজের কাজটা করেছে হামজা চৌধুরির দল। খালিদ জামিলের ভারত প্রচণ্ড প্রেস নির্ভর। প্রতিপক্ষের রক্ষণে ঢুকে প্রেস করতেও দ্বিধা নেই তাদের। বাংলাদেশ তাই নিজেদের লো বিল্ডআপ দিয়ে তাদেরকে আমন্ত্রণই জানালো প্রেসিংয়ের। বাংলাদেশের পায়ে বলের দখল তেমন না থাকলেও, বাংলাদেশকে অন্তত পরিকল্পনাহীন মনে হয়। আর প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তাকে কিভাবে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে হয় সেটাই বাস্তবায়ন করলেন রাকিব হোসেন-শেখ মোরসালিনরা। বাংলাদেশের অর্ধে ভারতের আক্রমণ। সেই আক্রমণ নসাৎ করে শেখ মোরসালিন বল বাড়িয়ে দিলেন রাকিবের উদ্দেশ্যে। যেহেতু বাংলাদেশ দল ভারতকে নিজদের অর্ধে আমন্ত্রণ জানিয়েই রেখেছিল, সেহেতু ভারতের রক্ষণভাগ ঠিক মধ্যমাঠের কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। রাকিবের গতির সামনে পরাস্ত হন আশিষ রাই। রাকিবকে বল বাড়িয়ে দিয়ে পর মুহূর্তেই গোলবারের মুখে দৌড় শুরু করেছিলেন মোরসালিন। রাকিব এক দফা মাথা উঁচু করে দেখলেন মোরসালিন পৌঁছে গেছেন কাছাকাছি। একেবারে ফাঁকায় থাকা মোরসালিনের উদ্দেশ্যে রাকিবের বাড়িয়ে দেওয়া বল। গুরপ্রীতসিং সান্ধুর দুই পায়ের ফাক গলে সেই বলকে জালে জড়ান শেখ মোরসালিন। ক্ল্যাসিক কাউন্টার অ্যাটাকের দুই পাসে, ম্যাচের ১১ মিনিটে বাংলাদেশ এগিয়ে ১-০ ব্যবধানে। ব্যবধানে অক্ষত রেখেই বাংলাদেশ যায় বিরতিতে। যদিও এক্ষেত্রে আবারও ত্রাণকর্তা ওই ঝাকড়া চুলের হামজা। মিতুল মারমার শিশুসুলভ ভুলে বাংলাদেশের গোলদ্বার হয়ে যায় একেবারে উন্মুক্ত। লালিয়ানজুয়ালা চাঙটের ক্লিয়ার শট। গোল সুনিশ্চিত। এমন সময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন হামজা। বাঁচিয়ে দিলেন বাংলাদেশকে। ওই একটা গোলেই বাংলাদেশের বহু প্রতিক্ষীত জয়ের দেখা মিলল। চলতি বছরে বাংলাদেশ ম্যাচ ড্র করেছে, অন্তিম লগ্নের গোলে ম্যাচ হেরেছে। অধরা ছিল একটা জয়। সেই জয়টা এলো অবশেষে। ঘরের মাঠে, প্রায় ২৫ হাজার দর্শকদের আনন্দের হিল্লোলে ভাসিয়ে, বাংলাদেশ অবশেষে জিতল বটে। এ ম্যাচে বাংলাদেশ বাড়তি কিছুই করতে চায়নি। নিজেদের ডিফেন্সটা সলিড রেখে, মিড ব্লকে খেলেছে পুরোটা সময় জুড়ে। মধ্যমাঠে হামজা-সামিত সোমদের সামনে সৃজনশীল হওয়ার সুযোগটাই মেলেনি ভারতের মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের। তাতে করে প্রথমার্ধের কাউন্টার অ্যাটাকে আদায় করা বাংলাদেশের একটা গোলই শেষ অবধি জয়ের জন্য হয়েছে যথেষ্ট। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে, সম্ভাবনা আর কিছুই বাকি না থাকলেও, জয় পাওয়ার দুয়ার অন্তত খুলে গেল। এই দুয়ার মাড়িয়ে বাংলাদেশ এক রুপকথার জন্ম দেবে- তেমনটাই তো প্রত্যাশিত।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *