Spread the love

‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের অভিনয়ের কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। এ চলচ্চিত্রের বাস্তব রূপ দিতে গিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ধরা পড়েছেন নুর মোহাম্মদ (৩৩) নামে এক যুবক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে আসেন তিনি। কারাগারে যেতেই বাঁধে বিপত্তি।আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় বেরিয়ে আসে ভিন্ন এক গল্প। তিনি আসল আসামি নন। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।অন্যের হয়ে জেল খাটতে আসা নুর মোহাম্মদ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফকির আহাম্মদের ছেলে।এই মামলার আসল আসামি জোবাইদ পুতিয়া। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। কুমিল্লা আদালত ও কারাগার সূত্র জানায়, ২০১১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার একটি মাদক মামলায় জোবাইদ পুতিয়া নামের এক ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এরপর থেকে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন তিনি।পরে জামিনে মুক্ত হয়ে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। অভিযোগপত্র দাখিলসহ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ২০১৮ সালে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে জোবাইদ পুতিয়া পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে চলতি বছরের ১২ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী এ এইচ এম আবাদের মাধ্যমে জোবাইদ পুতিয়া পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এক ব্যক্তি। আগে থেকেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।পরে তাকে কুমিল্লা কারাগারে নেওয়ার পরদিন বাঁধে বিপত্তি। জোবাইদ পুতিয়ার ফিঙ্গারপ্রিন্টের সঙ্গে অমিল দেখা দেয় নতুন আসা এই ব্যক্তির। মামলার এজাহারে থাকা আসামির নাম-ঠিকানা ও প্রদত্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে নতুন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তার নাম নুর মোহাম্মদ। মূল আসামি জোবাইদ পুতিয়ার বাবা-মায়ের নাম-ঠিকানার সঙ্গে দুই দুজনের মিল নেই। পরে কারা কর্তৃপক্ষ ওই দিনই বিষয়টি আদালতে লিখিতভাবে জানান। তবে এ ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে গতকাল মঙ্গলবার সকালে। এ বিষয়ে আইনজীবী এ এইচ এম আবাদ বলেন, ‘আত্মসমর্পণের দিন আসামি তার নাম জুবাইদ পুতিয়া বলে জানান। তার কাছে জাতীয় পরিচয় চাওয়া হলে তিনি প্রবাস থেকে আসায় তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গে নেই, পরে দেবেন বলে আমাদের জানান। কিন্তু কারাগারে যাওয়ায় তিনি ধরা পড়েছেন। বিষয়টি জানার পর স্তব্ধ হয়ে গেলাম। পেশাগত জীবনে এমন প্রতারণা দেখিনি।’ কিভাবে নুর মোহাম্মদ আসেন— জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, ‘আমার সহকারী শ্রীমন্ত নুর মোহাম্মদকে নিয়ে এসেছিল। এরপর আমি তার পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছি।’শ্রীমন্ত বলেন, ‘সুমন নামের পরিচিত এক ব্যক্তি নুর মোহাম্মদকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল। এরপর আমি তাকে স্যারের (এ এইচ এম আবাদ) সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই।’ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন বলেন, ‘নতুন করে কারাগারে কোনো আসামি এলে সাধারণত পরদিন তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। একই নিয়মে নতুন এই আসামির ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার পর দেখি, মূল আসামি জোবাইদ পুতিয়ার সঙ্গে মিল নেই। পরে ওই দিনই বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে লিখিতভাবে জানানো হয়। তবে আদালত থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেব। বর্তমানে নুর মোহাম্মদ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।’তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর মোহাম্মদ জানান, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে পাঁচ দিনে মুক্তির আশ্বাসে তিনি জেল খাটতে এসেছেন।’ কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মুহাম্মদ বদিউল আলম বলেন, ‘একজনের হয়ে অন্যজন জেল খাটলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। আমরা চাই যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’ আগামীতে যেন কুমিল্লাসহ সারা দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে। সেজন্য আইনজীবীদের আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এ আইনজীবী। জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে এখনই বিষয়টি জেনেছি। আমি চট্টগ্রামে একটি মিটিংয়ে রয়েছি। এ ব্যাপারে জেনেই আপনাকে বিস্তারিত জানাতে পারব।’

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *