কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সদর বাজারে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ পাহারাদারকে বেদম পিটিয়েছেন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। আহত পাহারাদারের নাম মো. দুলা মিয়া। তিনি উপজেলা সদরের পূর্বপাড়া এলাকার মৃত সেকান্দর আলীর ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি রাতে বাজার পাহারার কাজ করে আসছিলেন। শুক্রবারে বিকেলে আহত পাহারাদার বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা সাংবাদিকদের নিকট বলেন। এ ঘটনায় ঘটনায় বিভিন্ন মহলে নিন্দা জ্ঞাপণ করা হয় এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তিব্র-নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান উত্তর জেলার সভাপতি সহ-কারী অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন। এছাড়াও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বুড়িচং সদর সড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,বৃহস্পতিবার রাত প্রায় আড়াইটার দিকে বাজার পাহারার মাঝে কিছুটা বিশ্রামের জন্য এক মোড়ে বসেন দুলা মিয়া। এ সময় যুবদল নেতা দেলোয়ার হোসেন সেখানে এসে পাহারাদারের ওপর ক্ষিপ্ত হন। কেন পাহারা না দিয়ে বসে আছেন-এমন প্রশ্ন করলে দুলা মিয়া জানান, তিনি কিছুক্ষণ আগে বসেছেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে দেলোয়ার হাতে থাকা কাঠের দণ্ড দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন। এতে তাঁর পিঠ ও ঘাড়ে একাধিক আঘাত লাগে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আহত দুলা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি আমাকে কুকুরের মতো পেটাতে থাকেন। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। প্রাণ বাঁচাতে তাঁর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হয়। তবুও তিনি ক্ষান্ত হননি। পরে অন্য পাহারাদাররা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।”
আহতের ছেলে গিয়াসউদ্দিন বলেন, “আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে রাতের বেলা পাহারার কাজ করছেন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতেও বাজারে গিয়েছিলেন। শুক্রবার সকালে লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে তাঁকে আহত অবস্থায় পাই। এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।” অভিযুক্ত যুবদল নেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “ ওই পাহারাদার দায়িত্ব পালনে অবেহেলা করার কারণে বাজারে চুরি-ডাকাতি বেড়ে গেছে। ডিউটি না করে বসে মোবাইল চালাচ্ছিল। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, পরে তাকে মারধর করা হয়। বাজার কমিটির সদস্যরা বসে বিষয়টি সমাধান করবেন।” এদিকে ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আহত পাহারাদার ও তাঁর স্বজনরা। বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, একজন শ্রমজীবী বৃদ্ধ পাহারাদারকে এভাবে নির্মমভাবে মারধর করা মানবিকতার পরিপন্থী। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
