চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির অঙ্গীকার রেখে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ২৮ দফার এ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।” সিসা কারখানায় অভিযান, ৬ জনের কারাদণ্ড মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের অনুষ্ঠানে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “৫ অগাস্ট ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রনয়ণ করা হল।” জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের প্রথম ঘোষণা আসে অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির তরফে। গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনে তারা, যেটি প্রকাশের কথা ছিল বছরের শেষ দিন; ৩১ ডিসেম্বর। শুরুতে সরকার এর সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পরে সরকারের তরফে ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগের কথা বলা হয়। এরপর চলতি মাসের প্রথমার্ধে জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয় সরকার। এরপর প্রণীত খসড়ার ওপর দলগুলোর ফের মতামত চায় সরকার। সেই মতামত নেওয়ার পর শনিবার সরকার জানায়, জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে এবং জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে তা জাতির সামনে ঘোষণা করা হবে। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনের বিষয়ে ঘোষণাপত্রের বলা হয়েছে, দেশের জনগণ ‘যুক্তিসঙ্গত সময়ে’ অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে আরও দুটি দফা যোগ করা হয়। যে দুটি দফা যুক্ত হয়েছে, তার একটিতে গণঅভ্যুত্থানের নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। নতুন যোগ হওয়া আরেকটি দফায় বলা হয়েছে, পরিবেশ ও জলবায়ু সহিষ্ণু অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন কৌশলের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষণ করার কথা। চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে পরিবর্তন আনা হয় কয়েকটি দফার শব্দ ও বাক্যেও।