Spread the love

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের ভরাসার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী চেতু মিয়া হিরু মিয়া দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে নিষ্ঠা ও ভালোবাসার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিদিন স্কুলের শুরু ও শেষের ঘণ্টা বাজানো, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা—এসবই ছিল তার জীবনের অংশ। শেষ পর্যন্ত সেই ঘণ্টার সাথেই বিদায় নিলেন তিনি। নিজের কর্মজীবনকে বিদায় জানিয়ে এবার বেজে গেল তার নিজেরই ছুটি। গত সোমবার (৩০ জুন ২০২৫) ছিল চেতু মিয়া হিরুর শেষ কর্মদিবস। এ উপলক্ষে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুল হাসানের তত্ত্বাবধানে এবং প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত হয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।

বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন, মিষ্টিমুখ ও ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান। পরে ফটোসেশনের শেষে একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাকে নিজ বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

জানা গেছে, চেতু মিয়া হিরু ৪০ বছর আগে ভরাসার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন। তখন বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ছিল সীমিত। নিজের পরিশ্রম ও আন্তরিকতায় তিনি বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষার্থীবান্ধব করে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়েছেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষের সাথেও তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন,হিরু শুধু একজন কর্মচারী ছিলেন না, ছিলেন আমাদের পরিবারেরই অংশ। ৪০ বছর ধরে তিনি নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন। তার সততা ও নিষ্ঠা আমাদের কাছে অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি এবং কালের কণ্ঠের বার্তা সম্পাদক ফারুক মেহেদী স্মৃতিচারণ করে বলেন,আমার ছেলেবেলার ভরাসার হাই স্কুলে তিনি ছিলেন একজন সহায়ক স্টাফ, যিনি ঘন্টা বাজাতেন। কখনও কোনো দাবি করতে দেখিনি। সৎ, নির্মোহ, অন্তর্মুখী এই মানুষটি সত্যিকারের হিরো। জীবনের প্রতিযোগিতায় টাকা-পয়সা বা সম্পদের পেছনে না ছুটে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। তাকে আমার লাল সালাম। বিদায়ের আবেগঘন মুহূর্তে চেতু মিয়া হিরু বলেন,স্কুলের ঘণ্টা বাজানো, ছাত্রছাত্রীদের মাঠে খেলতে দেখা — এগুলোই ছিল জীবনের আনন্দ। বিদায় নিতে কষ্ট হচ্ছে, দোয়া করবেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে তাকে সম্মান জানান। এসময় অনেকেই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। গ্রামের মানুষের মুখেও শোনা যাচ্ছে, স্কুলের ঘণ্টা মানেই হিরু। চার দশক ধরে বিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে নিজের ছাপ রেখে যাওয়া সকলের প্রিয় হিরু ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা চিরকাল অটুট থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *