প্রতীক্ষার প্রহর প্রায় শেষ। প্রায় দেড় যুগ পর প্রিয় স্বদেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসে দেশে ফিরতে পারেন তিনি । গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কিন্তু আইনী জটিলতার কারনে দেশে ফিরতে অপেক্ষা করেন তিনি। এরপর তার মামলাগুলো আইনী প্রক্রিয়ায় চলতে থাকে। প্রতিটি মামলায় মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে বেকসুর খালাস পান তিনি। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশে ঘুস লেনদেনের অভিযোগে করা মামলা থেকে তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এরমধ্য দিয়ে বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা রইল না। সেই সঙ্গে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বাধা কেটে গেল। এদিকে,বিএনপি চেয়ারপারস বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। কবে ফিরবেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা চলছে।তবে, মা ছেলে এক সঙ্গে ফিরবেন না। প্রথমে খালেদা জিয়া ও তার কিছুদিন পর তারেক রহমান ফিরতে পারেন বলে লন্ডন সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার কিছুদিন পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের লিডারের (তারেক রহমান) দেশে যাওয়ার সময় নিয়ে এখনো নিশ্চিত বলতে পারছি না। ম্যাডাম খালেদা জিয়া যাওয়ার কিছুদিন পর হয়তো তিনি দেশে ফিরবেন। একসঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি।।খালেদা জিয়া ফেরা নিয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি বলেন, আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম ঈদ করে দেশে ফিরে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এখন তিনি ঈদের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফিরবেন। মালেক বলেন, চিকিৎসকরাও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে ম্যাডামকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে এখানে ফ্লাইটেরও একটি বিষয় আছে। ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দু-এক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে ম্যাডাম দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। সব মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশে ঘুস লেনদেনের অভিযোগে করা মামলা থেকে তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবাহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এতে এক এগারোর সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে মামলা করে। বিএনপিপন্থি আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনো স্বাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। এখন কোনো মামলা না থাকার কারণে তারেক রহমানের দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই। সেনা-সমর্থিত এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একাধিক দুর্নীতির মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন তারেক রহমান। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন। দেশ ছাড়ার সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলের নেতৃত্বের ভূমিকায় ফেরেন। খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেকের বিরুদ্ধে এক-এগারো সরকার এবং পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ৮৫টি মামলা দায়ের করেছিল।তার আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন,এক-এগারো সরকার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তারেকের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৪-৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিছু বড় মামলার মধ্যে রয়েছে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, অবৈধ সম্পত্তির মামলা, সিঙ্গাপুর মানি লন্ডারিং মামলা, নড়াইলে মানহানির মামলা এবং ঢাকার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা।এই ছয়টি মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আপিল বিভাগ সবগুলোই তার পক্ষে রায় দিয়েছেন। জাকির হোসেন আরও বলেন,এই ছয়টি মামলা বাদে ৫ আগস্টের পর অন্যান্য মামলার অভিযোগপত্র খারিজ করা হয়েছিল। বাকি মামলাগুলো হয় হাইকোর্ট খারিজ করে দিয়েছিলেন অথবা স্থগিত করেছিলেন। বিভিন্ন জেলায় দায়ের করা এই মামলাগুলিতে নাশকতা, চাঁদাবাজি এবং মানহানির অভিযোগ ছিল। সর্বশেষ ঢাকার একটি আদালত গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির হত্যা মামলার আসামি সাফিয়াত সোবাহান সানভীরকে দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২১ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের মামলায় তারেক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন। ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি করা হয়। মামলাটিতে ২০০৮ সালের ২৪ এপ্রিল তারেক ও বাবরসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চাজশিট দাখিল করে দুদক। পরে ওই বছর ১৪ জুলাই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকেই তারেকের দেশে ফেরা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা চলছে, তবে বিএনপি নেতারা কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ করেননি। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তারেক রহমানের বাসায়ই অবস্থান করছেন। তারেক রহমান লন্ডনে থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেনা-সমর্থিত এক এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একাধিক দুর্নীতির মামলা থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছাড়েন তারেক। দেশ ছাড়ার সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দলের নেতৃত্বের ভূমিকায় ফেরেন।সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ভাগ্য বদলে যায়। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিন পাওয়ার পর তারেক লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি পরিবারের সঙ্গেই থাকছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তারেকের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তার প্রত্যাবর্তন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। ঈদুল ফিতরের পরপরই হোক বা আরও পরে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে তার পুনরাবির্ভাব পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।