কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায় ছাত্রদলের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী।সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বুড়িচং অফিস সড়ক বাইপাস মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।আহতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম নামের একজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।আহত সাইফুল ইসলাম বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলেরর সাবেক সহ-সভাপতি। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানের অনুসারী। অন্যটি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সোমবার বিকেলে এই দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মোকাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জাকির হোসেনকে পিটিয়ে আহত করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর পুলিশ তাকে আটক করতে গেলে পালানোর সময় জাকিরের মৃত্যু হয়। সরকার পতনের পর গত ৯ সেপ্টেম্বর বুড়িচং থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন উপজেলা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ জাহেরকে। একইসঙ্গে তানভীর ও সাইফুল নামের দুইজনকে আসামি করা হয়। কিন্তু মামলা হওয়ার পর নিজেদের ছাত্রদলের নেতা বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন তানভীর ও সাইফুল। এরপর মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে বাদী ও মিজানুর পক্ষের মাহফুজকে হুমকি দেন জসিম পক্ষের ছাত্রদল নেতারা। কথা না শোনায় বাদী মাহফুজের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। মাহফুজের ওপর হামলা ও হুমকির প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে উপজেলা সদরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন মিজানুরের কর্মী-সমর্থকেরা। এ সময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসীম উদ্দিনের গ্রুপের ছাত্রদলের নেতারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে হামলা চালায়। এতে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম হামলার বাধা দিতে এগিয়ে গেলে তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে পেটে আঘাত করা হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ বিষয়ে মিজানুর পক্ষ ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ উদ্দিন বলেন, “আমরা মাহফুজের ওপর হামলার নিন্দা জানাতে প্রতিবাদ করছিলাম। এ সময় অপর পক্ষের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইকবালের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিনের অনুসারী ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক স্বপন আহমেদ। তিনি বলেন, “বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের অন্য কোনো গ্রুপ নেই। মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন দাবি করে কয়েকজন তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বলে শুনেছি। এ ঘটনার সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।” বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, “এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রসঙ্গত, বুড়িচং উপজেলায় বিএনপির দুইটি পক্ষ। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসীম উদ্দিনের একটি এবং সাবেক চেয়ারম্যান ও বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের একটি পক্ষ। দুই পক্ষের মধ্যে সব সময় উত্তেজনা বিরাজ করে।
সূত্র: প্রথম আলো
