টানা বর্ষণে নোয়াখালীর পৌর এলাকাসহ জেলার ৯টি উপজেলায় নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। জেলা সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়কগুলো। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দারা। সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যাও। Noakhali 5 gঅনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিন মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। পৌর শহরের প্রধান সড়কের একটি অংশ ছাড়া সবগুলো সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার ৯টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলো জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এ বৃষ্টিতে ভেসে গেছে প্রায় ছোট বড় শতশত মাছের খামার। Noakhali 4 এদিকে নোয়াখালী পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের সব কয়টি সড়ক ও পাড়া মহল্লার রাস্তাগুলো দুই ফুট থেকে আড়াই ফুট পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। প্রধান সড়ক ও তার পার্শ্ববর্তী সবগুলো সড়কের পাশে থাকা দোকানগুলোতে পানি ঢুকে পড়েছে। বহুতল ভবনগুলোর নিচ তলার বাসাগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না-বান্না ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে এবং পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়া শহরবাসীর এ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচের কক্ষ, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা আবহাওয়া অফিস, জেলা মৎস্য অফিস, প্রেসক্লাব, রেডক্রিসেন্ট, বিআরডিবি, বিদ্যুৎ অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড কক্ষ, শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম, নোয়াখালী সরকারি কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিসে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। Noakhali 3 এদিকে জেলার প্রধান সড়কের একটি অংশসহ টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মহিলা কলেজ সড়ক, জেলখানা সড়ক, মাইজদী বাজার সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক এখন কয়েক ফুট পানির নিচে ডুবে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন জীবিকার তাগিদে বের হওয়া শ্রমজীবী-কর্মজীবী হাজার হাজার মানুষ। নোয়াখালী পৌরসভার বাসিন্দা মিজান বলেন, নোয়াখালী পৌরসভা দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভাগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু কয়েক বছর যাবত এ পানি নিষ্কাশনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। অধিকাংশ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। Noakhali 2 নোয়াখালী জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল ৭টা পর্যন্ত ১৭৫ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আরও দুই এক দিনও বৃষ্টিপাত হবে। এর ফলে জেলাটিতে বেড়েছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের ১৮ দিনে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন নারী-শিশুসহ ৫২১ জন। নারী-শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে সোমবার (১৯ আগস্ট) ভর্তি হয়েছেন ১২৪ জন। এতে বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। Noakhali 1 জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় এ বছর এক লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৪ হেক্টর। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর আমন আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া শাকসবজি আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে বীজতলা, রোপা আমন ও শাকসবজি ডুবে গেছে। বেশিরভাগের ক্ষতি হয়েছে। নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা সমস্যা এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা যেগুলো পানি চলাচলে বাধা তৈরি করে, সেগুলো উচ্ছেদে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খালের ওপর অবৈধ বাঁধ ও স্থাপনা উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।