কুমিল্লায় পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার এই সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কুমিল্লার কোটবাড়ি এলাকা। এদিন দুপুরে পূর্বঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে অনবরত রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি ও র্যাবের সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ৫ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অন্তত ৬০০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ও বিজিবির দু’টি গাড়ি। সংঘর্ষের কারণে মহাসড়কের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী লেনে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় চালক ও যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছি। পুলিশ নির্বিচারে আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। আজকে পুলিশের নির্মম আচরণ দেখেছি আমরা। পুলিশের হামলায় আমাদের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে কয়েকজন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, কোটবাড়ি এলাকায় অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে। শিক্ষার্থীদের ইটের আঘাতে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত পরে জানানো হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ ফজলে রাব্বি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ছাত্র, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যসহ ৫৩ জন আহত রোগী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। আহতদের মধ্যে বিজিবি দুজন সদস্য হলেন শাহীন ও নাহিদ। এছাড়া, কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ৩৫ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। সেখানে ১৩ জন ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। ময়নামতি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকবাল বাহার মজুমদার জানান, মহাসড়কে পুলিশ সদস্যরা টহলরত রয়েছে। যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যাওয়ায় এখন যান চলাচল স্বাভাবিক।