কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের বাকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা মো. কবির হোসেন দীর্ঘ পাঁচ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে মিথ্যা মামলার শেকল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গত ৬ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২৬ এর সম্মানিত বিচারক আওলাদ হোসেন মোহাম্মদ জুনায়েদ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে ২০২০ সালে দায়েরকৃত জিআর মামলা নং ১০৪৭/২০ স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে আসামি কবির হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠন করা হলেও চার বছরেও রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে পারেনি। অভিযোগ গঠনের পর মোট ১৩টি সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করা হয়, কিন্তু প্রতিবারই সাক্ষীরা অনুপস্থিত ছিলেন। এতে মামলার কোনো অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। আদালত আরও বলেন, ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা ৩৩৯(গ)(১) অনুযায়ী একটি মামলার বিচারিক সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৮০ কার্যদিবস। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্মারক নং ১৭০৫৪(১৬), তারিখ: ৩০ আগস্ট ২০১৫ অনুসারে তিন বছরের অধিক পুরোনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা ও সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলাটিতে আর ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা নেই। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। একইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দেন, আসামির নামে পূর্বে জারি করা সকল পরোয়ানা বা প্রসেস অবিলম্বে প্রত্যাহার (রিকল) করতে হবে। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় কবির হোসেন বলেন,“আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করা এবং মানসম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিছু কুচক্রী ব্যক্তি মিথ্যা মামলাটি সাজিয়েছিল। আমি পরিবারসহ ভয় ও অপমানের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। তবে দেরিতে হলেও বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।” স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ মামলার সময়কালীন হয়রানিতে কবির হোসেন ও তার পরিবার মানসিক ও সামাজিক সংকটে পড়েছিলেন। আদালতের রায় ঘোষণার পর স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। মানবাধিকারকর্মী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, “এ ধরনের মিথ্যা মামলার কারণে নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হয়। আদালতের এই রায় সমাজে ন্যায়বিচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।” বুড়িচংয়ের সাধারণ মানুষ আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রতিহিংসার কারণে নির্দোষ কাউকে মিথ্যা মামলায় জড়াতে না পারে এবং আইনের শাসন সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর হয়।
