চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এক পাইলট নিহত হয়েছেন। নিহত পাইলট হলেন স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ। বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বিএনএস ঈসা খাঁ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যায়। স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিএমপি বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা। বিমানে দুজন পাইলট ছিলেন, যাদের মধ্যে উইং কমান্ডার সুহান আহত অবস্থায় জহুরুল হক ঘাটির মেডিকেল স্কোয়াড্রনে চিকিৎসারত। অন্যজন ছিলেন অসীম জাওয়াদ। বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অসীম জাওয়াদ মানিকগঞ্জ জেলার মোহাম্মদ আমান উল্লাহ পুত্র, তিনি বিমান বাহিনীর জহুরুল হক ঘাটির অফিসার্স আবাসিক এলাকার নীলিমা-এ ১ পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার সংসারে স্ত্রী, এক মেয়ে এক ছেলে রয়েছে। দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের এলাকা নৌ-বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। নদীতে নেমেছেন উদ্ধার কাজের ডুবুরি দলরা। নদীল দু’পাড়ে উৎসুক জনতার ভীড়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে প্রশিক্ষণ বিমানটি নৌ-বাহিনীর বোট ক্লাবের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেন তারা। উপরে উঠার কিছুক্ষণ পরই বিমানটির পেছনে আগুন জ্বলতে দেখেন। বিমানটি একটি চক্কর দিতেই বিধ্বস্ত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে দ্রুতগতিতে পড়ে যায়। এসময় বিমান থেকে দুইজন পাইলট প্যারাস্যুটের সাহায্যে নদীতে পড়তেও দেখেন তারা। প্যারাস্যুটে পাইলটদের পড়তে দেখে বোট নিয়ে ছুঁটে যান মাঝিরা। একজনকে নদী থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা এবং অপরজনকে নদীর পাড়ের বাঁধ থেকে উদ্ধার করেন নৌ-বাহিনীর সদস্যরা। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, মাতব্বর ঘাট থেকে বোটে করে নদী পাড় হওয়ার সময় আকাশে একটি বিমানের পিছনে আগুন জ্বলতে দেখি। মুহুর্তের মধ্যেই বিমানটি নদীতে পড়ে যায়। এসময় দু’পাইলট প্যারাস্যুটের সহযোগিতায় একজন নদী এবং অপরজন নদীরপাড়ে বাঁধের পাথরে পড়ে। আমরা নদীতে পড়া উইং কমান্ডার সুহান নামে এক পাইলটকে উদ্ধার করে বোটের মাধ্যমে নিয়ে আসি। অপরজনকে উদ্ধার করতে গেলে তার অবস্থা আশঙ্কাজন হওয়ায় নৌ-বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্ণফুলী মর্ডান ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনর্চাজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের ডুবুরিরা কাজ করছেন বিমানটি উদ্ধারে। জানা যায়, নিহত স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ ২০০৭ সালে এসএসসি ও ২০০৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ পেয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন, সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১০ সালে (বাফা) বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমি)-তে যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন লাভ করেন একজন পাইলট অফিসার হিসেবে। তিনি ছিলেন এফ-৭ এমজি-১ এর অপারেশনাল পাইলট ও এলিমেন্ট লিডার। ‘ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে’ জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন কোর্সের তাগিদে ভ্রমণ করেছেন চীন, ভারত, তুরস্ক ও পাকিস্তানে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর’স স্কুল অফ বিএএফ-এ স্টাফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। অসীম জাওয়াদ নিজের ট্রেনিং জীবনে সকল বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন গৌরবমন্ডিত ‘সোর্ড অফ অনার’। এসসিপিএসসি থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ‘সোর্ড অফ অনার’ বিজয়ী। ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস কোর্সে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন মফিজ ট্রফি। এছাড়া তাঁর দায়িত্বশীলতা ও কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য প্রশংসা পেয়েছেন চিফ অফ এয়ার স্টাফ থেকে। এক মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক জাওয়াদের মর্মান্তিক বিদায়ে বিমানবাহিনীর পাশাপাশি সেনা ও নৌ বাহিনীর সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
