অতিবৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে হঠাৎ টইটম্বুর হয়ে উঠেছিল কুমিল্লার গোমতী নদী। আচমকা পানিবৃদ্ধিতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের কৃষি জমি ও ফসল। মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’দফা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে চরের উঁচু জমির শাক-সবজি ক্ষেত। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরের কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে গোমতীর প্লাবন ও জলাবদ্ধতায় কুমিল্লা জেলার প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থমূল্যে যার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার বেশি। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বয়ে আসা গোমতী নদীর পাড় ও চরজমিতে সারা বছর চাষ হয় বিভিন্ন শাক-সবজি। পলি পড়া উর্বর এসব জমিতে সাধারণত পানি না উঠলেও এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে। করলা, লাউ, কুমড়া, বেগুন, মরিচ ও মূলার মতো ফসলের ক্ষেত দুইবার প্লাবিত হওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা। শনিবার সরেজমিনে গোমতীর চর ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ কেউ ক্ষতি এড়াতে অপরিপক্ব ফসল তুলেছেন, আবার অনেকের জমিতে এখনও পড়ে আছে পঁচে যাওয়া ফসল। কিছু জমিতে মূলাসহ নানা ফসলের বীজ পানিতে ভেসে গেছে। জমিগুলো হয়ে গেছে একেবারে সমতল ও ক্ষতবিক্ষত। কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলি এলাকার কৃষক মো. নান্টু মিয়া বলেন, “গত বছরের বন্যায় আমরা কোমর ভেঙে গিয়েছিল। এবার একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু সব শেষ। কয়েক লাখ টাকার ঋণের ফসল পানিতে ভেসে গেছে। করলা, কোমড়া সব শেষ। হঠাৎ যেন এক ঝড় এসে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেল।” একই গ্রামের কৃষক মো. হালিম বলেন, “জমির বীজ কিছুই নাই। এখনও জমিতে পানি। ঋণ করে গাছ লাগাইছি, বিক্রি করে ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। এখন কি খাওয়াবো ছেলে-মেয়েদের? সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, কিছুই করার নাই।” এ বিষয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, “গোমতীর পানি বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শুধু গোমতী পাড়ের নয়, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম ও বুড়িচংসহ আশপাশের উপজেলার অনেক ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে রোপা আমন, বীজতলা ও চরের সবজির ক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” কৃষকদের দাবি, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের জরুরি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা এখন সময়ের দাবি।