আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। দুখু মিয়া থেকে বিদ্রোহী কবি তিনি জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে। দুখু মিয়া থেকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখনীর মাধ্যমে শোষণ এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, যা তাকে ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে পরিচিত করেছে। তবে এই বিদ্রোহী চরিত্রটি শুধুমাত্র তার সাহিত্যিক জীবনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তার জীবনের শুরুটাও ছিল সংগ্রামী। শৈশবে তার ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’, এবং তার জীবনের শুরু হয়েছিল কষ্ট ও অনটনে। রুটি-রুজির খোঁজে তিনি নানা জায়গায় ছুটে বেড়িয়েছেন। কখনো লেটোর দলে গান গেয়েছেন, আবার কখনো রুটির দোকানে কাজ করেছেন। জীবনে অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চয় হয়েছিল তার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ) বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সপ্তম শ্রেণির ‘আনন্দপাঠ’ বইয়ের তথ্যানুযায়ী, তিনি জীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছেন লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে। ১৯১৭ সালে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগ দেন, এবং এই সময়েই তার সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটে। নজরুলের লেখনীতে বৈষম্যহীন এবং অসাম্প্রদায়িক মানব সমাজের ধারণা উঠে এসেছে বারবার। মানবতার প্রতি তার ভালোবাসা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান তার কবিতায় ফুটে উঠেছে। ১৯২২ সালে লেখা তার বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ তাকে আলোর মত ছড়িয়ে দেয়। তার প্রতিভার আরেকটি বড় দিক ছিল তার সংগীত। শ্যামা সংগীত ও ইসলামী গজল- দুই ধারাতেই সমান দখল দেখানো নজরুলের লেখা গানের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। শিশুদের জন্য নজরুল লিখেছেন বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ, যেমন ‘ঝিঙেফুল’, ‘সঞ্চয়ন’, ‘পিলে পটকা’, ‘ঘুম জাগানো পাখি’, এবং ‘ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি’। তার লেখা নাটকও শিশুদের মধ্যে জনপ্রিয়, যেমন ‘পুতুলের বিয়ে’। নজরুলের কবিতা ও গান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। তার রচিত ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি আমাদের রণ-সংগীত। কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলা পঞ্জিকার তারিখ মেনে তার জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করে বাংলাদেশ।