২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লা জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জেলার প্রধান গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে এই দুই উপজেলার প্রায় ২২০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে বুড়িচংয়ে ৭০ কিলোমিটার এবং ব্রাহ্মণপাড়ায় ১৫০ কিলোমিটার সড়ক ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও এসব সড়ক মেরামত হয়নি। ফলে এলাকার লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের। ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কুমিল্লা,বুড়িচং, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে এই সড়কের অন্তত দেড় শতাধিক স্থানে পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ সময় লাগছে চলাচলে। গোমতি ব্রিজ পার হলেই শুরু হয় ভাঙাচোরা অংশ। যানবাহনগুলো চলতে হয় হেলেদুলে। বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে:সোনার বাংলা কলেজ থেকে এলপিজি গ্যাস ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত।বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার, ইছাপুড়া, খাড়াতাইয়া নতুন বাজার,বুড়িচং দক্ষিণ বাজার, উত্তর বাজার।ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ বাজার থেকে টাটেরা, বড়ধুশিয়া বাজার পর্যন্ত।এসব এলাকায় বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকায় রাস্তা হয়ে উঠেছে মরণ ফাঁদে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তা যানবাহন চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।স্থানীয়দের ক্ষোভ ও উদ্বেগ; শাসনগাছা গ্রামের সিএনজি চালক হায়দার আলী বলেন,”আমি ২০ বছর ধরে এই রাস্তায় গাড়ি চালাই। এত খারাপ রাস্তা আগে কখনো দেখিনি। এখন ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।” শিদলাই আমীর হোসেন জোবেদা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে কলেজে যেতে হয়। কিন্তু বন্যার পর থেকে অবস্থা ভয়াবহ। চোখের সামনে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।” বুড়িচং বাজারের ‘লামিয়া এয়ার ট্রাভেলস’-এর মালিক রোকসানা আক্তার বলেন,”প্রতিদিন কুমিল্লা থেকে বুড়িচং অফিসে আসতে কষ্ট হয়। রাস্তার খানাখন্দের কারণে মোটরসাইকেল চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।” এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা জাহান জানান,”কুমিল্লা-মিরপুর সড়কের বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এখতিয়ার। তবে ব্রাহ্মণপাড়া-দুলালপুর সড়কের টেন্ডার হয়েছে।” বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হোসেন বলেন, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি,এখনো প্রকল্প দেখি নাই, প্রকল্পগুলো দেখে আপনাদেরকে জানাবো। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ জানিয়েছে, কুমিল্লা-মিরপুর সড়ক সংস্কারে ইতোমধ্যে তিনবার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও নানা জটিলতায় বাতিল করা হয়েছে। তবে তারা আশ্বস্ত করেছে, খুব শিগগিরই টেন্ডার চূড়ান্ত করে সংস্কার কাজ শুরু হবে। দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্ভোগ থেকে রেহাই পায়।