কাজী ইমন ও মা মাহমুদা বেগম।ছবিঃ তালাশ বাংলা

মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা (এমবিবিএস) ২০২৩-২৫ শিক্ষাবর্ষের খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ইমন কাজী। এতে পরিবারের সবার চোখেমুখে আনন্দ থাকলেও আড়ালে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তা। মেডিকেলে ভর্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। অর্থের অভাবে মেধাবী এই তরুণের স্বপ্নপূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইমন কাজীর বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের বেড়াখলা গ্রামের দিনমজুর কাজী মনিরুলের ছেলে। সদ্য মেডিকেল চান্স প্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র ইমন কাজী ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পোমকাড়া সিদ্দিকুর রহমান এন্ড হাকিম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন গোল্ডেন জিপিএ-৫। ২০২৪ সালে বুড়িচং উপজেলার পারুরায়া আব্দুল মতিন খসরু কলেজ থেকে একমাত্র ইমন কাজীই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল। (৩০ জানুয়ারি ২০২৫) বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বেড়াখলা গ্রামে মামার বাড়িতে ইমন কাজী যে ঘরে থেকে লেখাপড়া করেছেন বেড়ার সেই টিনের ঘরটিও জরাজীর্ণ।একটু বৃষ্টি হলে টিনের চাল দিয়ে তাদের বসত ঘরে পানি প্রবেশ করে।থাকতে অসুবিধা হয় পুরো পরিবারের। তার বাবা কাজী মনির (৫৫) একজন দিনমজুর । তিনি এলাকার অন্যের জমিতে কাজ করে রোজগার করে সংসার চালান। মা মাহমুদা বেগম(৫০) গৃহিণী। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে ইমন কাজী দ্বিতীয়।তার বড় বোন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। তার ছোট বোন অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যায়নরত,ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে।

ইমন কাজী তালাশ বাংলাকে বলেন বলেন, এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি এবং এইচ এস সিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি।আমাদের কলেজ থেকে আমি শুধু গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম।এই সফলতার পিছনে মা-বাবা ও শিক্ষকদের অনেক শ্রম ছিলো।এখন খুলনা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।কিন্তু তার মা মাহমুদা বেগম অসুস্থ চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল।এখন টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছি না।চিকিৎসক হয়ে মা-বাবার দুঃখ দূর করতে চাই। বিনা মূল্যে গরিব মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে চাই। কিন্তু টাকার অভাবে আমার সেই স্বপ্নপূরণ হবে কি না, জানি না।

অসুস্থ বাবা কাজী মনির ও অসুস্থ মা মাহমুদা বেগম সব স্বপ্ন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে।তারা বলেন, ‘আমাদের ছেলে-মেয়েকে মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করে যাচ্ছি।তার বাবা অন্যের জমিতে সাকালে কাজ করতে যায়,বাড়িতে ফিরে সন্ধ্যায়।দৈনিক যে পারিশ্রমিক এ টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। ইমন কাজীর বাবা-মা আরও জানায়,আমরা গরিব,ভাঙা ঘরে থাকি। অভাবের সংসার।দৈনিক সামান্য আয় দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। ইমন কাজীর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবর শুনে পরিবারের কেউ সেদিন রাতে আনন্দে ঘুমাতে পারেনি। কিন্তু ভর্তি হতে অনেক টাকার দরকার। পড়াশোনার খরচ চালাতে প্রতি মাসে টাকা দিতে হবে। এত টাকা আমরা কীভাবে দেব?ছেলের ভর্তির টাকা জোগাড় করা নিয়ে অনেক চিন্তায় রয়েছে।তাই সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন। এ বিষয়ে ইমন কাজীর শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও আব্দুল লতিফ তালাশ বাংলাকে জানায়,ইমন কাজীর পরিবার দরিদ্র একটি পরিবার।তাদের বসতঘরটিও জরাজীর্ণ। কোনো রকমে তাদের সংসার চলছে।স্কুলে পড়াকালীন আমরা বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করেছি। এখন মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়েছে,খবরটি আনন্দের হলেও আমরা চিন্তিত। পরিবারটি আর্থিকভাবে সচ্ছল না, তাই সকলের সহযোগীতা কামনা করি। এ বিষয়ে ইমন কাজীর সহপাঠী বন্ধু মেহেদী হাসান,প্রতিবেশী তানজিলা আক্তার,মো.বাদল মুহুরী, নার্গিস আক্তার তালাশ বাংলাকে জানায়,ইমন কাজী মেডিকেলে ভর্তি ও লেখাপড়া চালাতে অনেক টাকার দরকার,যা সংগ্রহ করা এই দরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। ভর্তির পর বই কিনতে অনেক টাকা লাগবে। এরপর পাঁচ বছর মেডিকেলে লেখাপড়ার অনেক খরচ। অত টাকা পরিবারটি কোথায় পাবে?’তাই সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। সিদলাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর তালাশ বাংলাকে বলেন, ইমন কাজীর বাবা একজন দিনমজুর।অন্যের জমিতে কাজ চালিয়ে অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। তাঁর দুই ছেলে-মেয়েই মেধাবী।বিগত দিনে তাদের জরাজীর্ণ ঘরের জন্য কিছু টিন দিয়ে সহয়তা করেছি,এখন ছেলেটির মেডিকেলে ভার্তির জন্য আমি কিছু সহযোগীতা করব,পাশাপাশি বিত্তবান লোকজনের এগিয়ে আসার উচিত বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদা জাহান তালাশ বাংলাকে জানান,এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি,মেডিকেল ভর্তির চান্স প্রাপ্ত ছেলেটির সম্পর্কে এই মাত্র অবগত হয়েছি।তবে তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *