উত্তরাঞ্চলে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি লালমনিরহাট সদরের গোকুন্ডার রতিপুরে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু জেলায় কয়েকদিন ধরে চলা টানা বর্ষণে রবিবার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে হাজারো বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। রাস্তাঘাট ডুবে কোথাও কোথাও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে ঝুঁকিতে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষদের। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় তিস্তা নদীসহ এ অঞ্চলের অন্য নদনদীর পানি ধীর গতিতে কমলেও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি রবিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জানা গেছে, রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ, ঝাড়সিংহেশ্বর, খগারচর, জুয়ার চর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ী, বাইশপুকুর ও জলঢাকা উপজেলার ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ী, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকু-া ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে। তাতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি চরের বাসিন্দারা। ডুবে গেছে আমন ফসলের খেত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজনের ভাষ্য, টানা বৃষ্টি ও তিস্তায় পানি বাড়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তা নদী বেষ্টিত ১৫টি চর গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, তার ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। লোকজন আতঙ্কে আছেন। তিস্তার চর বেষ্টিত ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ায় উত্তরাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে নিম্নাঞ্চল পাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পানি বাড়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমার ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। রবিবার বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রংপুরের তিস্তা তীরবর্তী তিন উপজেলা কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া এলাকার নদীপারের মানুষ সতর্ক অবস্থায় আছেন। তথ্যানুযায়ী, রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে অতিভারি বৃষ্টিপাতের (৮৯ মি.মি/২৪ ঘণ্টা) প্রবণতা কমে এসেছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী দুইদিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং জেলাসমূহের সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চল এবং কতিপয় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তী দুই দিনে তিস্তা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হতে পারে। পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি বাড়লেও তা ধীরে ধীরে নেমে যাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানির সমতল হ্রাস পেয়ে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় ও উজানের ঢল না থাকায় পূর্বাভাস অনুযায়ী পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কুড়িগ্রাম ॥ টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে কুড়িগ্রামের ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে, রংপুর জেলার কাউনিয়া রেলসেতু পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে পাবিত হয়েছে তিস্তার তীরবর্তী রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা, বিদ্যানন্দ, উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া, বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ এবং চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের আংশিক অংশ।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *