Spread the love

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অতীতের বস্তাপচা সব রাজনীতিকে পায়ের তলে ফেলে দিতে চাই। এই রাজনীতি বাংলাদেশে অচল। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি করতে হবে, যেই রাজনীতি হবে দেশ জাতি স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে। আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে যুব র‍্যালি ম্যারাথন ‘রাজপথে বিজয়ে’ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন জামায়াত আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের আজকের এই যুব ম্যারাথন এ কথা-ই দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য যে— অতীতের বস্তাপচা সব রাজনীতিকে পায়ের তলে ফেলে দিতে চাই। এই রাজনীতি বাংলাদেশে অচল। এই রাজনীতির পাহারাদারি যারা করবে তারা অচল মালে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশে নতুন রাজনীতি করতে হবে, যেই রাজনীতি হবে দেশ জাতি স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের পক্ষে।

যেই রাজনীতি হবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পক্ষে। যেই রাজনীতি হবে দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে চাঁদাবাজদের বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে দখলবাজদের বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে মামলাবাজদের বিপক্ষে, যেই রাজনীতি হবে ধর্ষণকারীদের বিপক্ষে। আমরা শান্তির এক টুকরো বাংলাদেশ চাই। এমন বাংলাদেশ চাই, যেই বাংলাদেশের প্রাণ হবে যুবসমাজ।
আমরা আমাদের দলের বিজয় চাচ্ছি না, আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বিজয়। এই বিজয়ই হবে আমাদের দলের বিজয়। এই বিজয়ের পথে যত বাধা আসবে, এই যুবকরা সেটা ভেঙে দিবে। কোন দেয়ালই আমরা টিকতে দিব না; কোন ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পাকিস্তান আমলের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য ক্ষেত্র বিশেষে অবিচার করার কারণে এদেশের মানুষ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল।

৬৯-এর গণ-আন্দোলনের হাত ধরে ৭০ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর একগুঁয়েমির কারণে জনগণের ভোটের ম্যান্ডেটে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন সেই নির্বাচিত দল এবং জনপ্রতিনিধিরা তাদের রাজনৈতিক অধিকার পাননি। সেদিন জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে একটি যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। এদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা এক কাতারে শামিল হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বুকভরা আশা আর চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে, যে প্রিয় দেশটি সব ধরনের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পাবে, সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে, দেশ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে, জাতি হিসেবে গর্ব করে বুক ফুলিয়ে বিশ্বের বুকে আমরা চলাফেরা করতে পারব। যারা সেদিন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা এমনটাই জাতিকে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ, যেই দেশটি বিপুল সংখ্যক মূল্যবান জীবন, সম্পদ আর ইজ্জতের ত্যাগ কুরবানির বিনিময় অর্জিত হয়েছিল, শাসকগোষ্ঠী জনগণের সাথে কথা রাখেনি। সেদিন যারা লড়াই করেছিলেন, জীবন দিয়েছিলেন, আহত-পঙ্গু হয়েছিলেন, তাদের সকলের প্রতি আমরা গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তারা জাতিকে ভুলে গিয়ে একটি পরিবার এবং সর্বোচ্চ একটা দলকেই তারা বাংলাদেশের মালিক এবং জমিদারে পরিণত করেছিলেন। বাকি সমস্ত মানুষকে তারা দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র খতম করে দিয়েছিলেন, মিডিয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন, মানুষের বাঁচার অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছিলেন, ভোটের অধিকারও তারা কেড়ে নিয়েছিলেন। এক কথায় জনজীবনে মানুষ হিসেবে মানুষের যে সমস্ত মৌলিক মানবিক অধিকার আছে সবগুলো সেদিন দলিত মতিত হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের শাসনামল প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, আমাদের পুলিশ ছিল, সেনাবাহিনী ছিল, আধাসামরিক বাহিনী ছিল, সাহায্যকারী আনসার ছিল। কিন্তু দল, গোষ্ঠী, পরিবারকে রক্ষা করার জন্য সেদিন একটি জল্লাদ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল যার নাম ছিল রক্ষীবাহিনী। এই জল্লাদ বাহিনীর হাতে মানুষের জীবন সম্পদ এবং ইজ্জতকে অবলীলায় তুলে দেওয়া হয়েছিল। যখন যাকে ইচ্ছা তাকে খুন করা হয়েছে, এ মানুষগুলোর সামান্যতম বিচার পাওয়ার কোনো অধিকার সেদিন ছিল না। মা-বোনদের ইজ্জত লুণ্ঠন করা হয়েছে, সম্ভ্রমশীল পরিবারের লোকেরা তাদের মেয়েদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। ঘর থেকে মা-বোনরা বের হতে চাইতেন না, এরকম একটা বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ছেলেরা ব্যাংক ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের জন্য বিশ্ব থেকে, এই বিধ্বস্ত অবস্থায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য যে সমস্ত রিলিফ সামগ্রী এসেছিল, তা বাংলাদেশে আসার আগেই বিদেশের মাটিতে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। ৭৪ এর দুর্ভিক্ষে লাখো লাখো মানুষ সারা বাংলায় হাটে, মাঠে, পথে, ঘাটে তাদের লাশ পড়ে থেকেছে। এই লাশ দাফন করার মতো কোন ব্যবস্থা সেদিন ভালোভাবে ছিল না। সেদিন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম ঢাকার লাশগুলোর দাফনের ব্যবস্থা করেছিল। তারা সোনার বাংলা গড়ার ওয়াদা করে বাংলাকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছিলেন।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *