কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ দল-বিএনপি ৯টি আসনে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষিত নামের তালিকা অনুযায়ী: কুমিল্লা-৫ আসনে মনোননয় পেলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন। স্বাধীনতার পর প্রথমবার এ আসনে বিএনপি’র বিরুদ্ধে মাঠে ভোটযুদ্ধে লড়বেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোবারক হোসাইন। ব্যাকফুটে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী। রাজনৈতিক সমীকরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ প্রাচীন জেলা কুমিল্লা। ভারত-সীমান্তবর্তী এই জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের একটি কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)। স্বাধীনতার আগ থেকেই এই আসনটি আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার ছিলো। স্বাধীনতা-পরবর্তী ১১টি জাতীয় নির্বাচন ও একটি উপ-নির্বাচনসহ মোট ১২টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছয়বার আর বিএনপি দুইবার বিজয়ী হয়েছে আসনটিতে।কুমিল্লা-৫ আসন ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। তার মধ্যে বুড়িচং উপজেলায় পড়েছে নয়টি, ব্রাহ্মণপাড়া আটটি।অনুসন্ধানে জানা যায়, এই আসন থেকে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু আ’লীগ দলের মনোনয়নে মোট পাঁচ বার নির্বাচিত ছিলেন (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮)। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিতসহ ৪-বারের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মো. ইউনুস।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক অঙ্গনে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এ আসনে বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট, নবীন ও প্রবীণ মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে থাকলেও মনোনয়ন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তবে এবি পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আপাতত ব্যাকফুটে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। মতিন খসরু ও অধ্যক্ষ ইউনুসের মৃত্যুর পর এ আসনে বিএনপি নেতৃত্বে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে প্লাস-মাইনাসের হিসাব-নিকাশ ও অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে তারা একাধিকবার ভোটের মাঠে ব্যর্থ হয়েছেন। এবার আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে জমে উঠেছে নতুন উত্তাপ।
এ আসনে অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থী থাকলেও বিএনপির হাজী জসিম উদ্দিনের নাম ঘোষণার পর থেকে নতুন করে আলোচনা আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ড. মোবারক হোসাইন এর নাম। এ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন আলোচিত মামলার আইনজীবী এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটির চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এটিএম মিজানুর রহমান, ২০০৮ সালের প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এসএম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া,কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য ডা.মো. নজরুল ইসলাম শাহীন।এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী,ভোটযুদ্ধে লড়বেন আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) দলের কেন্দ্রীয় প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূঁইয়া,বাংলাদেশ লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাংবাদিক কাজী খোরশেদ আলম, এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ ইসলামী ফন্ট নেতাকর্মীরা মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। তবে এখনো ঘোষণা হয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থীর নাম।এসব প্রার্থীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হরদম চালাচ্ছেন প্রচার- প্রচারণা। উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন তরুণ ভোটারদের।তাদের সক্রিয়তা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক উপস্থিতি এলাকাজুড়ে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।অন্যদিকে তৃতীয় প্রার্থীরা দীর্ঘদিন সংগঠন ও জনসম্পৃক্ততা থেকে দূরে থাকলেও ব্যাকফুটে রয়েছে বলে জানা যায়। দুই উপজেলার ভোটাদের ভাষ্যমতে বিএনপির প্রার্থীর লোকজনরা দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টার, লিফলেট, গণসংযোগ ও সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রচারণা বেশ তেজি।অপরদিকে জামায়াতের প্রার্থী ও সমর্থকরা গণসংযোগ,সমাবেশ ও ভোটাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে। এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্তির পর হাজী জসিম উদ্দিন তার নেতাকর্মীদের একটি নোটিশে জানিয়েছেন নমিনেশনকে কেন্দ্র করে মিছিল ,আতশবাজি,শোডাউন, মিষ্টি বিতরণ ইত্যাদি কর্মকান্ড নিষেধ। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন তালিকা প্রকাশের পর জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ড. মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, কুমিল্লা-৫ ইনশাআল্লাহ দাঁড়িপাল্লা জিতবে। তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং এমন বার্তা নিয়ে মানুষের বাড়িতে যাচ্ছি। মানুষও ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তারা নতুন কিছু দেখতে চায় এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ নেতা আর দেখতে চায় না। স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিনের দলীয় রাজনীতির সংঘাত ও বিভাজনে সাধারণ মানুষ আশাহত। এই বাস্তবতায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের পরিকল্পনা করেছি।
