গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবম গ্রেডে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব করেছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন। শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হাতে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামাল আহমেদ। সাংবাদিকদের বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি না দেওয়ার ফলে অনেকেই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। যদিও বেতন-ভাতার ওয়েজবোর্ডে আমাদের সরাসরি এখতিয়ার নেই, তবে আমরা আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে সুপারিশ করেছি। প্রতিবেদনে ন্যূনতম নবম গ্রেড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, রাজধানীতে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ঢাকা ভাতা দেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিসিএস ক্যাডারদের নবম গ্রেডে যে বেতন দেওয়া হয়, সাংবাদিকদের শুরুর বেতনও যেন সেই মানদণ্ডে নির্ধারিত হয়, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। কামাল আহমেদ বলেন, এই নীতিমালা সারাদেশে সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া, ঢাকায় কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ‘ঢাকা ভাতা’ দেওয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে। সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের জন্য ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত। প্রথমে ‘শিক্ষানবিশ সাংবাদিক’ হিসেবে এক বছর কাজ করতে হবে, তারপরই প্রমোশন পাওয়ার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও কমিশন প্রধান বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি ‘সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এই আইনের খসড়াও কমিশনের পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৬০০টি পত্রিকা সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৫২টি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত ও বিক্রি হয়। এর মাধ্যমে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। কামাল আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, গণমাধ্যমে অবৈধ অর্থের প্রবাহ বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় ও অস্বচ্ছতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের মালিকানা দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর আবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেগুলোতে জনস্বার্থের চেয়ে রাজনৈতিক স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন একটি প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র একটি গণমাধ্যমের মালিকানা নিতে পারবে বলে প্রস্তাব করেছে। এ বিষয়ে ‘ওয়ান হাউস ওয়ান মিডিয়া’ নীতিরও সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার পাশাপাশি এই দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই সংস্থাকে স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। অনলাইন পোর্টালের জন্য কমিশন ৭ দফা সুপারিশ করেছে, যা গণমাধ্যমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

By তালাশ বাংলা ডেস্ক

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আক্কাস আল মাহমুদ হৃদয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *